ঠিকাদারি নিয়ে চট্টগ্রামের খাদ্য বিভাগে চলছে তুঘলকি কাণ্ড

কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তান-শাশুড়ির নামেও ঠিকাদারি লাইসেন্স

নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর পর পর দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল পরিবহন ঠিকাদার। কিন্তু দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দরপত্র আহবান। আগের ঠিকাদারদের তিন মাস পর পর মেয়াদ বাড়িয়ে চলছে খাদ্য পরিবহনের কাজ। এমন অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ৪৬৯ জন ঠিকাদারদের বেশিরভাগই এই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকটাত্মীয়। অথচ ২০১৮ সালে ইস্যু করা এই পরিবহন ঠিকাদারদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত বছরের জুন মাসেই।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে কয়েক বছর ধরে চলছে অনিয়ম। ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেতে বারবার দরপত্রের বিষয়টি সামনে আসার পরও কৌশলে আটকে দেওয়া হচ্ছে দরপত্র আহ্বান। নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহবান না করায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, খাদ্য বিভাগের এসব নিয়মের মূলে জড়িত রয়েছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও চলাচল সংরক্ষক কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

জানা গেছে, সরকারি অর্থায়নে বিদেশ থেকে আমদানি করা খাদ্যশস্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসছে দেশে। এসব খাদ্য আসার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্যশস্য মজুদ করা হচ্ছে হালিশহরের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম এবং উত্তর পতেঙ্গার সাইলোতে। খাদ্যগুদাম থেকে দেশজুড়ে সেনাবাহিনী-বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের চাল, গম এবং সরকারি খাদ্যবান্ধব প্রকল্পের খাদ্যসহায়তা চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার বিভিন্ন খাদ্যগুদামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয় পরিবহন ঠিকাদার।

এক্ষেত্রে দূরত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনা করে ঠিকাদারদের মাইলপ্রতি পরিবহন ভাড়া দেয় খাদ্য বিভাগ। এ কাজে প্রতিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বছরে আয় হয় ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

জানা যায়, ২০১৮ সালে ইস্যু করা ৪৬৯টি পরিবহন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত বছরের জুন মাসে। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নতুন কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের মাধ্যমে লাইসেন্স ইস্যুর উদ্যোগ নিচ্ছে না খাদ্য বিভাগ। আগের নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স তিন মাস পরপর সাময়িক নবায়ন দেখিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনের কাজ চলমান রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে আগের নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা যাচাই-বাছাই করে জানা গেছে, ৪৬৯টি পরিবহন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, শাশুড়িকে।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দরপত্রের কাজ করছি না তা নয়। নিয়ম অনুসারে খাদ্য সরবরাহের কাজ চলমান রয়েছে। আগের ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী খাদ্য পরিবহন সরবরাহ চলছে। তাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ওই মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে দরপত্রের আহ্বান করা হবে।’

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বজনদের লাইসেন্স দেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখন শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নেবো।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm