ট্রেনে ধর্ষিত তরুণীকে ৩০ ঘন্টা থানায় রেখে মেডিকেলে নেওয়া হল সকালে, প্রভাবশালীদের চাপ
২৪ ঘণ্টা পর নষ্ট হয়ে যায় অনেক আলামত
সিলেট থেকে চট্টগ্রামের দিকে আসতে থাকা উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে বান্দরবানের এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার পর ওই তরুণীকে টানা ৩০ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) থানার ভেতরে। ঘটনার ৩০ ঘন্টা পার হওয়ার পর ওই তরুণীকে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর ধর্ষণের অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে চারটার দিকে উদয়ন এক্সপ্রেসে বান্দরবানের এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। রাত ১০টায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি ঘটনার সময় কুমিল্লার লাকসাম এলাকা অতিক্রম করছিল। পরে ট্রেনটি বুধবার (২৬ জুন) সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছায়। এই ঘটনায় ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএস কর্পোরেশনের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে পুলিশ। এরা হলেন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার মো. জামাল (২৯), জামালপুরের মো. শরীফ (২২) ও মো. রাশেদুল ইসলাম (২৮)। আদালতের মাধ্যমে বুধবার (২৬ জুন) তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে চলন্ত ট্রেনের ভেতর তরুণী ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত নিয়ে শুরু হয়েছে গড়িমসি। ২৪ জুন ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি থানা)। ওইদিন সন্ধ্যায় অভিযুক্ত তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই সময়ও মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগী তরুণীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়নি।
ঘটনার ৩০ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে বান্দরবানের ওই তরুণীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুক্তভোগীকে পরীক্ষা না করালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এই মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট যথাযথ না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে আসামিরা শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়ে পেতে পারে।
অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষণের ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) প্রায় ৩০ ঘণ্টা কালক্ষেপণ করে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভুক্তভোগীকে নিয়ে গেছে। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন, প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতেই এটা করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তার সাড়া মেলেনি। তবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীর কাছে ভুক্তভোগীর মেডিকেল টেস্টে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথমে বুধবার (২৬ জুন) রাতে মেডিকেল টেস্ট করা হয়েছে বলে জানান। কিন্তু বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে জিআরপি থানা হেফাজতে রাখার ফুটেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে রয়েছে— এ তথ্য জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে একটু খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’
জানা গেছে, ঘটনার শিকার ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী উদয়ন এক্সপ্রেসের খাবার বগিতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসএস কর্পোরেশনের কয়েকজন কর্মী তরুণীটিকে শুরুতে উত্যক্ত করার চেষ্টা করে। পরে ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে ওই বগিতে তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। ওই তরুণীর বাড়ি বান্দরবান জেলায়। তবে তিনি আত্মীয়দের সঙ্গে ভৈরবে থাকেন।