প্রতিদিন প্রায় ২১০০ জন যাত্রী যাতায়াত করলেও কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারে ঢিলেঢালা। যাত্রীর নিরাপত্তা, রেলের সম্পদ রক্ষাসহ স্টেশনের দেখাশোনোর জন্য রয়েছে মাত্র ১১ জন গর্ভনমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ১৭ জন সদস্য। ফলে স্টেশনে ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে গেলে সাধারণ যাত্রী নিরাপত্তায় হিমশিম খেতে হয় জিআরপি ও আরএনবির সদস্যদের। এর মধ্যে স্টেশন এলাকা থেকে যাত্রীদের মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে কক্সবাজার রেলস্টেশনে ২৩ জন আনসার নিয়োগ দিলেও তাদের দায়িত্ব থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের জন্য এসব আনসার নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা দায়িত্বে যোগ দেন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। আর ৩১ ডিসেম্বর তাদের দায়িত্ব থেকে তুলে নেওয়া হয়। ফলে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে জিআরপি ও আরএনবির সদস্যদের ওপর।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ৮টায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন ১২৫০ জন যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার স্টেশন পৌঁছায়। গেটে তখন দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনজন আরএনবি সদস্য। কয়েকজন যাত্রীকে ভিআইপি নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত ছিলেন রেল পুলিশ সদস্যরা। একটি জায়গা কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই সময়।
এসময় কথা হয় ট্রেনে করে কক্সবাজার ঘুরতে আসা পর্যটক রাফিয়া (২২) ও মারুফের (৩০) সঙ্গে। তারা জানান, স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। যাত্রীদের নিরাপত্তার তেমন কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
জানা গেছে, ৬৮০ মিটার দীর্ঘ স্টেশনটির ১ নম্বর প্লাটফর্মের প্রস্থ ৮ মিটার, ২ ও ৩ নম্বর প্লাটফর্মের প্রস্থ ১২ মিটার করে। প্রতিদিন এই স্টেশনে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ এবং ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’ নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে। এই ট্রেন দুটি ঢাকা থেকে ছেড়ে এসে মাঝপথে চট্টগ্রাম স্টেশনে থামে। সেখান থেকে কক্সবাজার চলে আসে।
রহিম উদ্দিন মোল্লা (৪০) নামের স্থানীয় এক টমটম চালক জানান, কয়েকদিন আগে দুটি মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়েছে স্টেশন এলাকা থেকে। কিন্তু জিআরপি পুলিশ শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগ নিয়েছে।
কক্সবাজার রেলস্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘প্রতিদিন দুটি ট্রেনে করে প্রায় ২১০০ যাত্রী যাতায়াত করেন।’
কক্সবাজার স্টেশনের জিআরপি ইনচার্জ এসআই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজার স্টেশনে জিআরপির ১১ জন সদস্য দায়িত্বরত আছেন। এরমধ্যে আমি ছাড়া একজন এএসআই ও ৯ জন সিপাহী আছেন।’
ভিআইপিদের প্রটোকলের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় জিআরপি শতভাগ দায়িত্ব পালন করছে। তবে জনবল সংকটও রয়েছে আমাদের।’
কক্সবাজার স্টেশনে দায়িত্বরত আরএনবির এএসআই জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমিসহ ৩ জন হাবিলদার ও ১৩ জন সিপাহি স্টেশনের পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে দায়িত্ব পালন করে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি।’
এদিকে আনসারের বিষয়ে জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার স্টেশনে ২৩ জন আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের ৩১ জানুয়ারি দায়িত্ব থেকে তুলে নেওয়া হয়।’
আরএনবির কমান্ড্যান্ট (পূর্ব) রেজয়ান উর-রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার স্টেশনে জন্য ৭৫ জন জনবলের চাহিদা রেল ভবনে পাঠানো হয়ছে।’
এদিকে রেলস্টেশন দ্বিতীয় তলায় জিআরপি এবং আরএনবি সদস্যদের জন্য যে বিশ্রামাগার রয়েছে সেটি অপরিচ্ছন্ন ও স্যাঁতস্যাঁতে।
অপরিচ্ছন্ন বিশ্রাম কক্ষের বিষয়ে জিআরপির পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী বলেন, কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের বিশ্রামের জায়গা নিয়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করবো। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়েও খোঁজখবর নেবো।’
রেলওয়ের কর্মব্যবস্থাপক (পূর্ব) সাইফুল ইসলাম বলেন, ভিআইপিদের প্রটোকল দিতে হলে রেলওয়ের অনুমতি লাগবে। তাছাড়া শুক্রবার জানা মতে, ভিআইপি প্রটোকল দেওয়া মতো কেউ ছিলেন না। রেল পুলিশ যদি যাত্রী নিরাপত্তা না দিতে পারে তাহলে কি দরকার তাদের। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
ডিজে