টেকনাফের পাহাড়ে ভয়াল বন্দিশালা: সিগারেটের ছ্যাঁকা, নখ উধাও, টাকা না দিলে মালয়েশিয়া!

র‍্যাবের রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ২২ জন মুক্ত

কক্সবাজারের টেকনাফে রাতের আঁধারে চলল র‌্যাবের চিরুনি অভিযান। সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকার করাচিপাড়ার গহীন পাহাড়ে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় এবং মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা হয়েছিল ২২ জনকে। তাদের মধ্যে ছিলেন ১ জন বাংলাদেশি পুরুষ ও ২১ জন রোহিঙ্গা—১০ পুরুষ, ৪ নারী এবং ৭ শিশু। তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধশ্বাস অভিযানে এসব ভিকটিমকে জীবিত উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১৫।

রোববার (২৬ অক্টোবর) রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-১৫ এর সিপিসি-১ (টেকনাফ ক্যাম্প) এর একটি চৌকস দল পাহাড়ি ঝোপঝাড় আর পাথুরে ঢাল পেরিয়ে তল্লাশি চালায়। র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা অন্ধকারকে বন্ধু করে পালিয়ে যায়। এরপর উদ্ধার হওয়া ভিকটিমদের প্রাথমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

উদ্ধার কিশোর মোবারক (১৭) জানায়, গত ১৩ অক্টোবর বিকেলে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা আসামিরা সিএনজিতে তুলে তাকে অপহরণ করে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করে তার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একই কায়দায় বিভিন্ন ক্যাম্প ও এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদেরও ধরে আনা হয়। টাকা না দিলে মালয়েশিয়া পাচারের হুমকি দেওয়া হতো।

ভিকটিমদের বরাতে র‌্যাব জানায়, মুক্তিপণের টাকা না পেলে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হতো। কারও শরীরে সিগারেটের আগুনের পোড়া দাগ, কারও আঙুলের নখ প্লায়ার্স দিয়ে তুলে ফেলার নির্মমতার চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের দিন-রাত পাহাড়ে বাঁশের ঘরে আটকে রেখে খাবার এবং পানি পর্যন্ত বঞ্চিত করা হতো।

র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) সহকারী পুলিশ সুপার আ. ম. ফারুক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রাথমিক তদন্ত ও জবানবন্দির ভিত্তিতে মানবপাচারকারী চক্রের নয়জন সদস্যকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৭/৮/১০ ধারায় টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, পাচারকারী চক্র ইয়াবা কারবারের পাশাপাশি এখন মানবপাচারের ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট গড়ে তুলছে। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে। উদ্ধার হওয়া সব ভিকটিমের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ksrm