টুঙ্গিপাড়ায় ৪০ হাজার মানুষের মেজবান আয়োজনে মহিউদ্দিন চৌধুরী পরিবার

জাতীয় শোক দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় পিতা মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শুরু করা মেজবান আয়োজনের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তাঁরই পুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকা অবস্থায় নিজ উদ্যোগে মেজবানের আয়োজন করলেও গতবারের মত চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় ‘এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশন’ এই মেজবানের আয়োজন করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠ ও বালাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে একযোগে মেজবানের খাবার পরিবেশন করা হয়। দুটি স্থানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন ছিল। ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে ৩০ হাজার মুসলিম এবং ১০ হাজার অমুসলিমের জন্য মেজবানের আয়োজন ছিল। যার জন্য কেনা হয় ২০টি গরু ও ৩ হাজার মুরগি। কলেজ মাঠের আয়োজনে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি গরুর মাংস, সাদা ভাত, চনার ডলা দিয়ে লাউ ও নলার ঝোল পরিবেশন করা হয়।

এছাড়া বালাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের আয়োজন সাজানো হয়েছে মুরগির মাংস, সাদা ভাত ও ডাল দিয়ে। সেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। মেজবান আয়োজনের রান্নার যাবতীয় কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ হোসেন বাবুর্চির নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের একটি দল। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পুরো মেজবানের ব্যস্থাপনায় সহযোগিতা করেছে টুঙ্গিপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ।

এর আগে গত বুধবার দুপুরে (১৪ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে নওফেলের নেতৃত্বে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হয় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রায় চার শতাধিক নেতা-কর্মীর একটি বহর। জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত পথসভা ও মোনাজাত করা হয়। এসময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহিউদ্দিন পুত্র নওফেল বলেছেন, ‘দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ায় আমার বাবা মেজবান আয়োজন করে মানুষের মুখে তবারুক তুলে দিয়েছিলেন। আমার বাবা নেই। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা দায়িত্ব বলে মনে করি। নতুন প্রজন্মকে আমরা এ অনুশীলনে সম্পৃক্ত করতে চাই যাতে তারা ইতিহাসের সাথে পরিচিত হতে পারে ও শিখতে পারে। এছাড়া অনেকেরই ইচ্ছা থাকে টুঙ্গিপাড়ায় যাবার। তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন। তরুণরাও মুখিয়ে থাকে এ যাত্রায় সামিল হতে।’

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে মেজবানের আয়োজন।
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে মেজবানের আয়োজন।

নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নেতকর্মীরা জাতির জনকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুরে মেজবানে অংশ নেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে নওফেল ছাড়াও টুঙ্গিপাড়ায় গেছেন মহিউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীনও। এছাড়াও বহরে আছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, দেলোয়ার হোসেন খোকা ও মাহবুবুল হক সুমন, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল, চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ এবং হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও এতে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে এর প্রতিবাদে তৎকালীন শ্রমিক নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। বিষয়টি তৎকালীন সামরিক সরকার জানার পর তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। ১৯৭৭ সালে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবরটি পাকা করে দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর তিনি ১৫ আগস্টে টুঙ্গিপাড়া চলে যান। ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট থেকে সেখানে বড় পরিসরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করতেন মহিউদ্দিন।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!