‘টুকরো টুকরো করে হত্যা’ কথিত যুবলীগ নেতা মামুনের হুমকি

জমি দখল তার নেশা। পেশায় সে চাঁদাবাজ। ছিনতাইও আছে তার কর্মকাণ্ডের তালিকায়। মাদক স্পট থেকে সেয়ানা ট্যাক্স নিয়েও বানিয়েছে সে টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন চাঁদার দাবিতে। ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করার হুমকির ফোন রেকর্ড শুনে যে কেউ আন্দাজ করতে পারবেন তার আচরণের ভয়ংকর রূপ।

বলছিলাম চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ ও বাকলিয়া এলাকার কথিত যুবলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম মামুনের কথা।

YouTube video

আসাদগঞ্জের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী আধিপত্য বিস্তার করেছে বাকলিয়ায়ও। তার অপরাধ সাম্রাজ্যজুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় ৪০ থেকে ৫০ জনের বাহিনী। এই বাহিনী নিয়ে দিনের বেলা যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় দেখালেও সন্ধ্যা নামলেই আচরণ বদলে যায় তাদের। সন্ধ্যার পরের আচরণে থাকে মারধর, হুমকি, ছিনতাই, জমি দখল, মাদক বাণিজ্যের মত অপরাধ। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মহোৎসবও চলে সন্ধ্যা নামলেই। না দিলে চলে মারধর, হত্যার হুমকিসহ অস্ত্রের মহড়া।

এক সময়ে টেকনাফের ইয়াবা সম্রাট সাইফুলের অনুসারী এই মামুনের ঢাল এখন যুবলীগ। আসাদগঞ্জের মানুষ তাকে চিনে সাইফুলের সহযোগী হিসেবে। টেকনাফ থেকে সাইফুলের পাঠানো বড় বড় ইয়াবার চালান আসতো মামুনের কাছেই। মামুন সে ইয়াবা বিক্রি করতো আসাদগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই রাতে টেকনাফের নাফ নদীর তীরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় সাইফুল।

এরপর গুরু বদলে ফেলে মামুন। যোগ দেয় বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকার টেকনাফের আবুল কালাম রশিদের সাথে। এরপর থেকে বাকলিয়ায় একক আধিপত্য শুরু করে এই কথিত যুবলীগ নেতা।

মামুনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শিকার লোকজনের অভিযোগ, কথিত যুবলীগ নেতা মামুন একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। তার রয়েছে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এক সময়ে তার এলাকা আসাদগঞ্জে দাপিয়ে বেড়ালেও ২০১৯ সাল থেকে বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিকেও তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে। তার সন্ত্রাসী গ্রুপ অলিতে-গলিতে বিক্রি করে ইয়াবা। করে ছিনতাইও। চাঁদাবাজি, অপহরণ, জমি দখলসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয় এই মামুনের নেতৃত্বে।তার এসব কর্মকাণ্ডে কেউ বাঁধা দিলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি, চালানো হয় অস্ত্রের মহড়া।

সম্প্রতি তারেকুল ইসলাম মামুনের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ব্যবসায়ী নেতা কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। এই হত্যার হুমকি দেওয়ার একটি অডিও ক্লিপ বের হয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে ওই অভিও ক্লিপে চট্টগ্রাম হার্ডওয়্যার ওয়েল ফেয়ার মার্চেন্ট এসোসিয়েশন সহ-সভাপতি মো. শামসুউদ্দিন সিদ্দিকী মুন্না শাহ্ নামে এক ব্যবসায়ী নেতাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দিতে শোনা যায়। শেষ বারের মতো মায়ের কাছ থেকে ক্ষমা ও দোয়া চেয়ে নিতে বলা হয় এতে। এরপর টুকরো টুকরো করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ফোন কেটে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী মো. শামসুউদ্দিন সিদ্দিকী মুন্না শাহ্ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসাদগঞ্জের কথিত যুবলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম মামুন একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার রয়েছে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। সে গ্রুপ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আসাদগঞ্জ ও বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখলসহ নানান সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত করে আসছিল। আমি তার এইসব অপকর্মের প্রতিবাদ শুরু করি। তারা এরপর বাকলিয়া থানার মিথ্যা একটি মামলায় আমার নাম ঢুকিয়ে দেয়। সে মিথ্যা মামলার জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করি। গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। জামিনের পর থেকে সে আমার দোকানে গিয়ে এবং ফোনে কল করে প্রতিনিয়ত হত্যা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার জীবন ও পরিবার নিয়ে হুমকিতে আছি। সে আমার ভাই ও আমাকে বারবার ফোনে অশ্লীন ভাষায় গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী মামুনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। না হলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে। জামিনে বেরিয়ে গত রোববার (১৭ জুলাই) জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি আমি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm