জেএসসি উত্তরপত্র মূল্যায়নে গাফিলতি—ফেঁসে যাচ্ছেন ৩৪ শিক্ষক

0

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে গাফিলতির দায়ে শাস্তি পেতে যাচ্ছেন নিরীক্ষকের দায়িত্বপালন করা ৩৪ শিক্ষক। শাস্তি হিসেবে এ ৩৪ শিক্ষককে পরবর্তী এক বছরের জন্য পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও নিরীক্ষণ সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হবে না। শিক্ষাবোর্ডের পরবর্তী শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হবে।

নির্ধারিত সম্মানির বিপরীতে পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন পরীক্ষকরা। তাদের মূল্যায়নের পর তা নিরীক্ষকের হাত ঘুরে প্রধান পরীক্ষকের কাছে যায়। কিন্তু তিন দফায় উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে মোট নম্বর যোগে কিংবা বৃত্তভরাট ও নম্বর বসানোর ক্ষেত্রে ভুল করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। ফলে বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া পরীক্ষার্থীরা। অথচ এ ভুলের দায়ভার বর্তায় অনেকটা পরীক্ষার্থীদের কাঁধে। এজন্য আবেদনকারীকে গুণতে হয় নির্ধারিত অংকের টাকাও। যে সকল শিক্ষকদের সামান্য ভুলে পাবলিক পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ফলাফলে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। চলমান এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে। তবে মৌখিকভাবে শাস্তির বিষয়টি ৩৪ জন শিক্ষককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ।

এ প্রসঙ্গে নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেক কাজের মধ্যে দুই একটা ভুল থাকবে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরীক্ষকরা বা নিরীক্ষকরা যথাযথ দায়িত্বপালন করলে বেশি মাত্রায় ভুল থাকার কথা না। কিন্তু প্রতিবারই পুনর্নিরীক্ষণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রে ভুল ধরা পড়েছে। তাদের ফল পরিবর্তনও হচ্ছে। ভুলের ধরণ দেখে ৩৪ জন শিক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তারা খুব শীঘ্রই শাস্তি পাবে।’

s alam president – mobile

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়নে বৃত্ত ভরাট এবং নম্বর যোগের ক্ষেত্রে বেশি ভুল করে থাকেন পরীক্ষকরা। ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় উত্তরপত্র মূল্যায়নে প্রায় ৪ হাজার পরীক্ষক নিয়োজিত ছিলেন। আর ৭টি বিষয়ে প্রধান পরীক্ষক ছিলেন ১২০ জনেরও বেশি। একজন প্রধান পরীক্ষকের অধীনে দু’জন করে নিরীক্ষক দায়িত্বপালন করেন। সে হিসেবে প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষক নিরীক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। এর মধ্যে পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষক শাস্তি না পেলেও ৩৪ জন নিরীক্ষককে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের জেএসসির উত্তরপত্র (খাতা) পুনর্নিরীক্ষণে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মোট ১৪ হাজার ৫৮৭টি আবেদন জমা পড়ে। প্রথম দফা প্রকাশিত ফলাফলে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় ১১ হাজার ২৪ জন শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে।

এদিকে, প্রথম দফায় ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে ভুল এলে পুনর্নিরীক্ষণের পর গত ২৯ জানুয়ারি সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষাবোর্ড। পুনর্নিরীক্ষার ফলাফলে মোট ২১১ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। ফেল থেকে পাস করে নতুন ৪২ জন। পুনর্নিরীক্ষণে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পায় একজন। প্রথম দফায় প্রকাশিত ফলাফলে ওই শিক্ষার্থীর ফলাফলে ফেল দেখানো হয়। নতুন করে জিপিএ-৫ পায় আরও ৫৫ পরীক্ষার্থী। এছাড়াও পাস করা ১৬৮ জন শিক্ষার্থীর ফলে পরিবর্তন ঘটেছে। আগের বছরেও (২০১৮ সালে) জেএসসির পুনর্নিরীক্ষণে মোট ২৯৩ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০৩ পরীক্ষার্থী। আর ওই বছরও প্রথম দফায় ফেল করা একজন শিক্ষার্থী পুনর্নিরীক্ষণে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

Yakub Group

এসআর/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!