চার লাখ টাকা হারিয়েছিলেন মোবাইল জুয়ায়। লোভ ছিল একটি আইফোন আর আইপ্যাড পাওয়ার। সেই লোভেই হয়তো শেষমেশ প্রাণটাই গেল আবদুর রহিমের। চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ান বাজার এলাকায় একটি খালে ভেসে ওঠা অজ্ঞাত লাশটি এখন নিশ্চিতভাবে শনাক্ত—ভোলার লালমোহন উপজেলার রাজমিস্ত্রি রহিম, বয়স আনুমানিক ৩৮।
গত শনিবার (৩ মে) সকালে কোতোয়ালী থানার পুলিশ খাল থেকে উদ্ধার করে ওই লাশ। শরীরে তেমন কোনো জখমের চিহ্ন না থাকলেও, বাঁকা হয়ে থাকা এক হাতে সন্দেহ হয়েছিল, বাঁধা ছিল কি না। পরে অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত হয়—রহিমের হাতে কোনো বাঁধন ছিল না।
রহিমের ফুফাতো ভাই মো. নোমান জানিয়েছেন, মৃতদেহের ঘাড় ও পেটের পুরনো অপারেশনের দাগ দেখে তারা শনাক্ত করেন। নোমান বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্মাণকাজে পড়ে গিয়ে রহিমের পেটে রড ঢুকে যায়। তখন অপারেশন হলে পেটে দুটি কাটা দাগ পড়ে। তার আগেও ঘাড়ে অস্ত্রোপচারের একটি দাগ ছিল।’
নোমানের ভাষ্য অনুযায়ী, রহিম তার অধীনে কাজ করতেন। ঘটনার দিন, বৃহস্পতিবার সকালে অন্যান্য মিস্ত্রিদের সঙ্গে চা খেতে নামলেও তিনি ছিলেন চুপচাপ। বেলা ১১টার দিকে একটি ফোন পেয়ে হঠাৎ সাইট ছেড়ে বেরিয়ে যান। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুই দিন পর তার মরদেহ পাওয়া যায় দেওয়ান বাজারের খালে।
ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের সূত্রে নোমান আরও জানান, রহিম গত কয়েক মাস ধরে মানসিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলেন। ছিলেন চুপচাপ, অস্থির। জানা যায়, তিনি একটি মোবাইল অ্যাপ-ভিত্তিক জুয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সম্প্রতি একটি বিদেশি নম্বর থেকে রহিমকে ফোন দিয়ে বলা হয়, তার নামে দামি একটি আইফোন ও একটি আইপ্যাড এসেছে। এসব ছাড় করাতে ঢাকার বিমানবন্দরে বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছ থেকে কয়েক দফায় টাকা আদায় করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় চার লাখ টাকা দেন রহিম।
রহিমের বাবা জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগের দিন তিনি ছেলের কাছে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান, পরে সন্ধ্যায় আরেক দফা ১২ হাজার টাকা দেন। সাইটের খরচের কিছু টাকা নিজের কাছে রেখে সেটাও খরচ করে ফেলেন রহিম।
রহিম নিখোঁজ থাকার সময় পরিবারের উদ্বেগ বাড়ে। শনিবার সন্ধ্যায় র্যাব কার্যালয়ে গেলে তাদের চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় যেতে বলা হয়। সেখান থেকে কোতোয়ালী থানা হয়ে শেষমেশ মরদেহ শনাক্ত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
কোতোয়ালী থানার এসআই বাহার মিয়া বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এটি হত্যা, আত্মহত্যা, না কি দুর্ঘটনা—তা এখনও স্পষ্ট নয়।’
রহিমের পরিবার ও সহকর্মীরা মনে করছেন, মোবাইল জুয়ার ফাঁদে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েই হয়তো এমন পরিণতির শিকার হয়েছেন তিনি।
জেজে/সিপি