জুম অ্যাপে যেভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়

শতভাগ শিক্ষার্থী নিয়ে বিভিন্ন বর্ষের ৬০টি পরীক্ষা শেষ

0

শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইনে নিচ্ছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। প্রতিদিন দুই বেলা করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই পরীক্ষা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বর্ষের ৬০টি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আরও ১৬৩টি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের সেশনজট থেকে মুক্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে দীর্ঘ এক বছর শিক্ষার্থীদের ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হয়। এসময় অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা করে শিক্ষাঋণ দেয় কর্তৃপক্ষ।

আরও জানা যায়, গত ১৫ জুন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একটি কোর্সের অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন ওই বর্ষের ৫৭ শিক্ষার্থী। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৬০টি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পরীক্ষা নেওয়ার পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ নিজেই।

s alam president – mobile

অনলাইনে যেভাবে চলছে পরীক্ষা
পরীক্ষার আগে অফলাইন পরীক্ষার মতোই শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। প্রশ্নপত্র তৈরি করার পর নিয়মানুযায়ী মডারেশন করে সিলগালা করে রাখা হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০ মিনিট আগে শিক্ষকরা বিশেষায়িত অ্যাপ গুগল ক্লাসরুমে প্রশ্ন আপলোড করেন। শিক্ষার্থীরা ১০ মিনিটের মধ্যে হাতে পাওয়া প্রশ্ন খাতায় লিখে নেন। এরপর গুগল ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে জুম অ্যাপে এসে শিক্ষার্থীরা উত্তরপত্র লেখা শুরু করেন। আর পরীক্ষায় কেউ অসদুপায় অবলম্বন করে কিনা তা কয়েকজন শিক্ষক নজরদারি করেন। কোন শিক্ষার্থী যদি কোনো কারণে জুম থেকে বের হয়ে যায় সাথে সাথে তাকে কল দেওয়া হয়। পাশাপাশি তার নামের পাশে তিনটা স্টার দেয়া হয়। এর পর তিনি আর পরীক্ষায় যুক্ত হতে পারেন না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মধ্যে রাখতে এবং শিক্ষা কার্যক্রমকে বেগবান করতে আমরা অনলাইনে এই পরীক্ষা নিচ্ছি। এর আগে আমরা এক বছর ধরে অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি। এতে দুইটা সেমিস্টার শেষ হয়েছে। এখন এক সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে। ঈদের পরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় না খোলে তাহলে ১৫ থেকে ২০ দিন ক্লাস নিয়ে আমরা পরের সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়ে নিবো। এর মাধ্যমে আমরা এক বছর এগিয়ে থাকবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষায় আমাদের শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। একটি জুম ২০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। আর তাদের পরীক্ষা তদারকি করার জন্য চারজন শিক্ষক চারটি ল্যাপটপে বসে থাকে। কেউ যদি এক মিনিটের জন্য বের হয় তাহলে তাকে সাথে সাথে কল দেয়া হয় এবং তিনটা স্টার দেয়া হয়। এর ফলে তার নম্বর কমে যাবে। আর কেউ যদি যান্ত্রিক গোলযোগ, বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট সমস্যার কারণে জুম থেকে চলে যায় তাহলে সেটা আমরা বুঝবো। তবে এরকম নজির তেমন একটা নেই। কেউ জুম থেকে আউট হয় না। আর আউট হলেও পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে চলে আসে। পুরো বিষয়টি আমি নিজেই দেখাশোনা করি।’

Yakub Group

উপাচার্য বলেন, ‘এই পরীক্ষা নেওয়ার আগে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কারন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা এখনো এই পদ্ধতির সাথে অভ্যস্ত নই। ফলে প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ পারবে না। আর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরাই সম্ভবত প্রথম, যারা অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছি।’

তিনি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি পরামর্শ রেখে বলেন, ‘যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই এভাবে পরীক্ষা নিতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীরা সেশনজট থেকে মুক্ত থাকবে এবং ঠিক সময়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারবে। এর জন্য অবশ্যই শিক্ষকদের স্বদিচ্ছা থাকতে হবে।’

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!