দুদকের জালে ‘সততা’র প্রোপাইটরসহ ৩ শুল্ক কর্মকর্তা

তথ্য গোপন ও জালিয়াতি করে দেড় কোটি টাকার বেশি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে মেসার্স সততা ইন্টারন্যাশনাল ও অনামিকা ট্রেডার্স নামের দুই প্রতিষ্ঠান। ১৫টি ঋণপত্রের মাধ্যমে ১৭টি চালানে বিল অফ এন্ট্রি দেখিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্য খালাস করে ওই প্রতিষ্ঠান। এতে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে— এমন অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন দুই প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর মো. আমিরুল ইসলামসহ তিন কাস্টম কর্মকর্তা।

অভিযুক্ত মো. আমিরুল ইসলাম চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানাধীন আমুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন পাটোয়ারীর ছেলে। তিনি মেসার্স সততা ইন্টান্যাশনাল ও অনামিকা ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর। ঢাকার ৯৭/১ পূর্ব বাসাবো এলাকার মেসার্স সততা ইন্টারন্যাশনাল ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ৩০ কাতালগঞ্জ এলাকায় অনামিকা ট্রেডার্সের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬-৯৯ সালে মেসার্স সততা ইন্টারন্যাশনালের নামের প্রতিষ্ঠানটি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডে ঢাকার নবাবপুর শাখায় ৮টি ঋণপত্র খুলে ৯টি চালানের মাধ্যমে প্রকৃত আমদানিকৃত পণ্যের প্রকৃত মূল্য ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৬৮ দশমিক ৮৬ মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ইনভয়েস জালিয়াতি করে ৫০ হাজার ৪৫৩ মার্কিন ডলার ‘সুপার গ্লু’ আমদানি পণ্য প্রদর্শন করে শুল্কায়ন করা হয়। এতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৩ লাখ ৭ হাজার ৪ দশমিক শূন্য ৬ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, ১৯৯৬-৯৯ সালে অনামিকা ট্রেডার্সের নামের প্রতিষ্ঠানটি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডে চট্টগ্রামের পোর্ট শাখায় ৮টি চালানে আমদানিকৃত পণ্যের প্রকৃত মূল্য ৪ লাখ ২১ হাজার ৮০ দশমিক শুন্য শুন্য মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ইনভয়েস জালিয়াতি করে ৩৫ হাজার ২১৭ দশমিক ষাট মার্কিন ডলার ‘সুপার গ্লু’ আমদানি পণ্য প্রদর্শন করে শুল্কায়ন করা হয়। সেখানেও বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৯ লাখ ৮৫ হাজার ৯২০ দশমিক শুন্য তিন টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়। তার দুই প্রতিষ্ঠান ভুয়া ইনভয়েস দেখিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ১ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৯২৪ দশমিক শুন্য ৯ টাকা কাস্টম শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় দণ্ডবিধির ৪২০,৪৬৭,৪৬৮,৪৭১ ও ৪০৯ ধারায় আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার আলমদর গ্রামের মৃত নুরুল হকের পুত্র ‘ডে অ্যান্ড নাইট’ নামে সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী জাফর আহম্মদ। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাফর আহমদ মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন তার ছেলে মনছুর আহম্মদ। ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর মনছুর আহম্মদও মারা যান। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের তাদের উত্তরাধিকারী না থাকায় বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানের কোন কার্যক্রম নেই বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুল্কায়নকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দায়-দায়িত্ব নিরূপণের জন্য নোটিশ দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা হাজির না হওয়ায় তদন্তকালে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন এপ্রেইজার এ টি এম আব্দুল্লাহেল কাফী, প্রিন্সিপাল এপ্রেইজার এ কে এম মাহাবুবুল ইসলাম ভূইঁয়া, প্রিন্সিপাল এপ্রেইজার এ টি এম জিয়াউল ইসলাম। মামলা দায়ের করার মাধ্যমে এইসব কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব ও গাফলতির বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বলেন, ‘অভিযুক্ত আমিরুল ইসলাম ও তিন শুল্ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করে ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন বরাবরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পর তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুআ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!