জালিয়াতি করে গ্যাসলাইন পেয়েছে স্মার্ট গ্রুপের আল রাজী ও সাদ-মুছার টেক্সটাইল কোম্পানি
মূল হোতা কর্ণফুলী গ্যাসের এমডি মাজেদসহ ৩ কর্তা
নিয়ম অনুযায়ী শিল্পখাতে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন নিতে আবেদন উপস্থাপন করার কথা রয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের পরিচালনা বোর্ডের সভায়। বোর্ড সভায় অনুমোদনের পরপরই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিপরীতে চাহিদাপত্র ইস্যু করার নিয়ম রয়েছে। অথচ বাস্তবে বোর্ড সভায় উপস্থাপনের আগেই গ্যাস সংযোগের অনুমোদন দিয়ে গ্রাহকের চাহিদাপত্রও ইস্যু করে ফেলে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। বোর্ড সভার ধারই ধারে না সরকারি এই সংস্থাটি। সম্প্রতি পেট্রোবাংলা গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন অবিশ্বাস্য অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে।
২০২২ সালের ১৭ মে কর্ণফুলী গ্যাসের এমডিসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের প্রতিবেদন দাখিল করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক) আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ।
এতে দেখা গেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড এবং সাদ মুছা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডকে টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন দেয় কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এর পেছনে সংস্থাটির এমডিসহ তিন কর্মকর্তা সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৭৫তম সভায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-উত্তর) চট্টগ্রামভিত্তিক স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডের ফাইলটি উপস্থাপন করেন। তাতে দেখা যায়, পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড নামীয় গ্রাহককে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে আগেই। তারও আগে পর্ষদকে না জানিয়েই ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ওই গ্রাহকের অনুকূলে চাহিদাপত্র বা ডিমান্ড নোট ইস্যু করে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
একই কাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রামভিত্তিক আরেকটি কোম্পানি সাদ মুছা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডকে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রেও। এক্ষেত্রে পর্ষদ সভার অনুমোদন নেওয়ার ধার ধারেনি কর্ণফুলী গ্যাসের এমডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ১৬০তম বোর্ড সভায় অনুমোদন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর কর্ণফুলী গ্যাসের ১৭৫তম বোর্ডসভায় প্রস্তাবটি আবার তোলা হলে কোম্পানিটি গ্যাস সংযোগের অনুমোদন পায়। তবে গ্যাস সংযোগ অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি সভার নির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি। সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডকে নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক পাইপলাইন অপসারণের ব্যয়ভার গ্রাহককে বহন করতে কোম্পানির পর্ষদ বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই নির্দেশনা না মেনেই নিয়মবহির্ভূতভাবে ওই প্রতিষ্ঠানকেও গ্যাস সংযোগ প্রদান করে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর কোম্পানির ১৭৫তম বোর্ডসভায় আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডকে গ্যাস সংযোগের বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান তৎকালীন জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেখানে নিয়মবর্হিভূতভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদানের বিষয়টির দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বহন করতে হবে বলেও বোর্ডসভায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
কিন্তু পরে বোর্ডসভার কার্যবিবরণীতে চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় তদন্তের বদলে ‘যাচাই-বাছাই’ লেখা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তদন্ত না করেই আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সকে গ্যাস সংযোগ দিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে কোম্পানির জোন-১-এর ডেসপাস বইয়ের পাতা পাল্টে ফেলে আল রাজীর বদলে জালালাবাদ সিএনজির ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেওয়ার ভুয়া এন্ট্রি বসানো হয়।
পেট্রোবাংলার গঠিত তদন্ত কমিটি এসব জালিয়াতির ঘটনায় কর্ণফুলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএ মাজেদ, কোম্পানির সাবেক সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ফিরোজ খান, মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-উত্তর) প্রকৌশলী শফিউল আজম খানকে দায়ী করেছে।
জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলে অপরপ্রান্ত থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।
সিপি