জামিন পেলেন এসপি বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যার আসামি ভোলা

চট্টগ্রামের সাবেক আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় এহতেশামুল হক ভোলাকে চার সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জামিনের মেয়াদ শেষে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন। নিহত মিতুর পিতার করা মামলায় ভোলাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতে ভোলার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ হাসিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।

আসামি ভোলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ হাসিবুর রহমান মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালতকে আমরা ভোলার আগামী জামিনের আবেদন করেছিলাম। ২০১৬ সালে মিতু হত্যার পর বাবুল আক্তারের মামলায় ভোলা গ্রেফতার হয়ে ২ বছর জেল খাটেন। এই ঘটনায় মিতুর বাবা মো. মোশারররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ৭ জনই জেলের ভিতরে। শুধুমাত্র ভোলাই বাইরে। আমি আদালতকে বলেছি মিতু হত্যা মামলায় যেহেতু ভোলাকে নতুন করে পুনরায় আসামী করা হয়েছে, তাই যেকোন সময় তার গ্রেফতারের সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম জামিন চাইলে আদালত এহতেশামুল হক ভোলাকে চার সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু কোন রুল ইস্যু করেনি। নিয়মানুয়ায়ী ৪ সপ্তাহের পর ভোলাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পনে করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামে গুলি করে মিতুকে হত্যা করা হয়। খুনিরা মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন এসপি বাবুল আক্তার। এ ঘটনায় ওই বছরের ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতে এ দুইজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের মূল ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে মুছার নাম উঠে আসে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি নগরীর বাকলিয়া এলাকার এহতেশামুল হক ভোলা সরবরাহ করে বলে জবানবন্দীতে বলা হয়। মুছা ও ভোলা এসপি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত। এরপর পুলিশ ভোলা ও তার সহযোগি মনিরকে একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে। পরে মুছার ভাই সাইদুল ইসলাম সাক্কু এবং মো. শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম রাশেদ ও নুরুন্নবী নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ওইবছর ৫ জুলাই তারা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পরে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান ভোলা।

স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনা জেরে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয়েছে বাবুল আক্তারকে। ওই হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। পুলিশ তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদও করে। এনিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে গতবছর জানুয়ারিতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। পিবিআই’র তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্তা উঠে আসে। এরপর বাবুল আক্তারের শশুর বাদী হয়ে গত ১২ মে বাবুলকে আসামি করে পৃথক একটি মামলা করেন। এ মামলায় বাবুল আক্তার এখন কারাবন্দি।

আর মূল পরিকল্পনাকারী মুছাকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে ধুম্রজাল রয়েই গেছে। পুলিশ বলছে মুছা পলাতক। তার সন্ধানদাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষনা দেয় পুলিশ। তবে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার ওইবছর ৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ওই বছর ২২ জুন বন্দর থানার তৎকালীন ওসি মহিউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মুছাকে গ্রেপ্তার করে।

আইএমই/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm