‘জাফরুলের ইশারায়’ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের ইউনিট কমিটি স্থগিত

অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের

দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের ১১ ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হলেও মাত্র দুই দিনের মাথায় হঠাৎ করেই এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হল। দীর্ঘদিন পর কমিটি ঘোষণা হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হলেও কমিটির কার্যক্রম হঠাৎ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কেন এবং কার ইন্ধনে এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে— সেটা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে যেসব নেতাকর্মী দলীয় কর্মকাণ্ডে সময় দিয়েছেন, নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন তাদেরই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারা জেল-জুলুম, মামলা-হামলায় নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরও মূল্যায়ন করা হয় কমিটিতে। এতকিছুর পরও হঠাৎ কেন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হল— সেটিই এখন ভাবিয়ে তুলেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। অনেকেই বলছেন, দু একজন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ নিজেদের আজ্ঞাবহ ‘পকেট কমিটি’ দিতে না পেরে কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করিয়েছেন।

গত ৭ সেপ্টেম্বর যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর উপস্থিতিতে যুবদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের পর্যালোচনা শেষে জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজগর দক্ষিণ জেলা যুবদলের ১১ ইউনিটের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেন। এর দুই দিন পর ৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অভিযোগে এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

এমন আকস্মিক ঘটনার পর যুবদলের কয়েকজন নেতা অভিযোগ তুলেছেন, দক্ষিণ জেলা যুবদলের ১১ ইউনিটের কার্যক্রম স্থগিত করার পেছনে বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর হাত রয়েছে। কমিটিতে সাবেক এই এমপির চাহিদামতো পছন্দের লোক স্থান না পাওয়ায় তিনি এমনটি করছেন বলেও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন। তাদের অনেকে বলছেন, বাঁশখালী উপজেলা যুবদলের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদসহ কয়েকটি পদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রতিপক্ষের কব্জায় চলে যাওয়ায় তিনিই মূলত এই কাজটি করেছেন।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্র কমিটি দিয়েছে, কেন্দ্রই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করছে। এখানে তো আমার কিছু নেই। শুধুই বাঁশখালীরটা স্থগিত করলে কথা ছিল। ১১ ইউনিটের কমিটির কার্যক্রমই তো স্থগিত করেছে। তাছাড়া বাঁশখালীতে সবাই আমার পছন্দের মানুষ। না হয় আমি কিভাবে ৪ বার এমপি হয়েছি?’

এ বিষয়ে বর্তমান কমিটিতে স্থান পাওয়া বাঁশখালী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবু আহমদ বলেন, ‘আমরা তো দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদল করে আসছিলাম। আমি স্কুল ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, থানা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। কেন্দ্রীয় যুবদল এবং জেলা যুবদলে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা পর্যালোচনা করে আমাকে আহ্বায়ক করেছেন। এতো কিছুর পরও কিছু সিনিয়র নেতা তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো পকেট কমিটি দিতে না পেরে কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। দল যাদের নমিনেশন দেয় তাদের পক্ষে আমরা জীবন বাজি রেখে কাজ করবো। কিন্তু আমাদেরও তো একটু স্বীকৃতি দিতে হবে।’

কমিটিতে স্থান পাওয়া বাঁশখালী থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক একেএম জালাল বলেন, ‘এখানে কিছু সিনিয়র নেতা আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে অভিভাবক সেজে আছেন। তারা নিজেদের মতো করে নিজেদের লোকগুলোকে কমিটিতে রাখতে চায়। পরিবারতন্ত্র চালু রাখতে চায়। ওনারা বিভিন্ন ধরনের ইস্যু দেখিয়ে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করালেন। যেমন জাফরুল ইসলাম চৌধুরী আছেন। ওনি তো দীর্ঘ ২৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এমপি-মন্ত্রী সবকিছুই তো হলেন। এতো বছর রাজনীতি করার পরও ওনার নামে বাংলাদেশের কোথাও একটা জিডি পর্যন্ত নেই। এদের কারণে আজকে সহযোগী সংগঠনগুলো পিছিয়ে।’

আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইসহাক মানিক বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরে রাজনীতির মাঠে ছিলাম। অনেক বছর ধরে আমরা ইলেকশন করছি। ধানের শীষের জন্য যুদ্ধ-জিহাদ করেছি। দেখতেছি তারপরও জাফর সাহেবের মন জয় করতে পারলাম না। এতোদিন পরে কমিটিতে আমাদের নামটা আসলো। কিন্তু হয়ত ওনার পরিবারের মানুষ হয়নি, আমাদের নামটা আসাতে তিনি অসন্তুষ্ট।’

দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নির্দেশে একটি বিভাগীয় টিম হয়েছে। এরা কিছু ফরম ছাড়ছেন, ফরমগুলো আমরা যাচাই-বাচাই করে যারা মাঠে ময়দানে কাজ করছে এমন ৩১ সদস্য বেছে নিয়েছি। পরে কেন্দ্রীয় বিভাগীয় কমিটি যাচাই-বাচাই করেছে। তারা যাচাই-বাচাই করে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে উপস্থাপন করেছেন। উপস্থাপন কমিটির মধ্যে কেন্দ্রে আমাদেরও ডেকেছেন। ডেকে আবার যাচাই-বাচাই করে কমিটি অনুমোদন করেছেন। এরপর কিছু নেতা অভিযোগ করছেন— এটি সঠিক হয়েছে, নাকি হয়নি। আবার যাচাইয়ের জন্য কেন্দ্র থেকে টিম আসবে। তারা আসার পর সিদ্ধান্ত নেবেন।’

চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি ও যুবদলের বিভাগীয় টিমের সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, ‘দক্ষিণ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে কমিটি হয় না। দীর্ঘদিন পরে কমিটি হয়েছে। এখানে চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির একটু ফারাক তো থাকবেই। কারণ চাচ্ছে ১০ জন। পাবে তো ২ জন। যেহেতু এটি বড় দল— এখানে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তি মিলবে না। সেক্ষেত্রে অনেক অভিযোগ হয়েছে। কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করছে অধিকতর যাচাই-বাচাই করার জন্য। যেন আমাদের যদি কোন ভুল থাকে সেটি সংশোধন করা যায়। চাইছে অনেক লোক, আমরা ওখান থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের দিছি। যদি আমাদের ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই সমন্বয় করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!