‘জলের টাকা জলে’ হালদায় তলিয়ে যাচ্ছে ১৫৭ কোটি টাকার বাঁধের ব্লক

হাটহাজারী-ফটিকছড়ি অংশে হালদায় ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ শেষ করার আগেই বিভিন্ন পয়েন্টে পানিতে তলিয়ে গেছে সিসি ব্লকের বাঁধ। বাহির থেকে মাটি কিনে খালের বাঁধ নির্মাণের সিডিউল থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। স্কেভেটর দিয়ে খালের কাছাকাছি ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণ করায় বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে। তেমনি চাষের সক্ষমতা হারাচ্ছে জমিগুলো।

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রকল্পের প্রতি কিউবিক ঘনফুট মাটির জন্য ১৭ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের কোন টাকা না দিয়ে জমির মাটি কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে ঠিকাদার। তাছাড়া ওইসব জমি থেকে নিয়ম না মেনে মাটি কাটা হচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতে আর কোন চাষাবাদ করা যাবে না। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। কিন্তু কোন সুরাহা মিলছে না বলে জানান তারা।

পাউবো সূত্রমতে, হালদা ও ধুরুং খালে মাটি এবং সিসি ব্লকে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ১৫৭ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মোট ১৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে-৪৬ কিলোমিটার মাটির বেড়িবাঁধ ও ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সিসি ব্লকের বাঁধ নির্মাণ। এর মধ্যে ৩৮ পয়েন্টে সিসি ব্লকের জন্য ১০৮ কোটি টাকা হালদা নদীতে এবং ১৩ পয়েন্টে ২৫ কোটি টাকা ধুরুং নদীতে বাকি টাকা বেড়িবাঁধের জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার।

জানা গেছে, এসব প্রকল্পের মধ্যে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি অংশে হালদায় ৪টি প্যাকেজ ও ফটিকছড়ির ধুরুং খালে একটি প্যাকেজের কাজ চলছে। হালদায় মোট ৫৮ পয়েন্টে এবং ধুরুং খালে ২৫ পয়েন্টে কাজ চলমান রয়েছে। হালদায় ৪ প্যাকেজের মধ্যে তিনটি ও ধুরুং খালে একটি প্যাকেজের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এহসান এন্ড জামান (জেবি)। হালদায় অপর একটি প্যাকেজে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং। এ পর্যন্ত হালদা ও ধুরুং খালে ৫ প্যাকেজ মিলে কাজ হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার মিটার সিসি ব্লকের কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদার। তবে হাটহাজারী অংশে কাজ শেষ করার আগেই নাজিরহাট নতুন ব্রিজের পাশে সিসি ব্লকসহ ধসে হালদায় তলিয়ে গেছে।

এলাকাবাসী ও কৃষকদের অভিযোগ, কাজ ঠিক মতো না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সমিতির হাট ইউনিয়নে ৭০০ মিটার সিসি ব্লকের কাজ সম্পন্ন হলেও সেখানেও দেখা দিয়েছে ধস। হালদায় সুন্দরপুর নাইচ্ছার ঘাট, জুগিনী ঘাট এলাকায় কৃষকের ধানি জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পুকুর সমান গভীর করা হচ্ছে। ধানি জমি থেকে মাটি কাটার সময় বাঁধা দিলে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধমক দেয় ঠিকানাদারের লোকজন। এমনকি কৃষকদের বলা হয়েছে এটি সেনাবাহিনীর প্রকল্প। এ কাজে বাধা দেওয়া যাবে না।

জুগিনীঘাটের কৃষক আকবর হোসেন বলেন, আমার ২০ শতক জমি স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে শেষ করে দিয়েছে। এখন আর এই জমিতে চাষ করতে পারবো না। সরকারের মাটি বা জায়গা প্রয়োজন হলে অধিগ্রহণ করবে জানি। কিন্তু তা না করে ঠিকাদার মনির আমাদেরকে সেনাবাহিনীর প্রকল্প বলে উল্টো ধমক দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, মাটি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে ঠিকাদারকে। এর জন্য বরাদ্ধ দেওয়া আছে। পরিবহন খরচও দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারকে। অকৃষি জমি থেকে মাটি কাটতে হবে। ধানি জমি নষ্ট করা যাবে না। তবে বাঁধের ত্রিশ ফুট দুর থেকে মাটি কাটতে হবে। বাঁধের কাছাকাটি মাটি কাটা যাবে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এহসান এন্ড জামানের (জেবি) মালিক মুনিরুজ্জামান বলেন, মাটি যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে কাটা হচ্ছে। কৃষিজমি নষ্ট হয়ে থাকলে সেটি আমি পরে দেখবো।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, কাজে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। কারণ ঠিকাদারের কাজগুলো খুব ভালো ভাবেই তদারকি করা হচ্ছে।

কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষকরা যদি মাটি না দেয় তাহলে ঠিকাদারের সাধ্য নেই কাটার। এটি কৃষকরা ঠিকাদারের সাথে বোঝাপড়া করবে। তবে আমরা প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ রেখেছি। সিসি ব্লক যেগুলো ধসে গেছে সেগুলো পুনরায় করে দিতে হবে ঠিকাদারকে।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!