জরুরি অবস্থায় চট্টগ্রামে বিদ্যুতের কার্ড রিচার্জ নিয়ে শঙ্কিত গ্রাহকরা

মাথাব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি এই সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রিপেইড সিস্টেমের আওতায় থাকা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন— কিভাবে ঘরের বিদ্যুৎ সচল থাকবে, কিভাবে প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ করবেন এই চিন্তায়। ঢাকায় বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার গ্রাহকদের জন্য ঘরে বসে কার্ড রিচার্জ কর‍ার সুযোগ চালু হয়েছে ইতিমধ্যে। ঘরবন্দি কেউ এজেন্টের কাছে যেতে না পারলে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) তালিকায় থাকা এজেন্টকে ফোন দিয়ে বাসায় বসে রিচার্জ করে নিতে পারবেন গ্রাহকরা। অথচ চট্টগ্রামে এ ধরনের সুবিধা তো দূরের, ‘বিদ্যুতের অফিস তো খোলাই আছে’— বলে হাত গুটিয়ে বসে আছে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকের চাপের মুখে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে বলছেন, রিচার্জ করতে অসুবিধা হলে কল করে যোগাযোগ করলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু কতোদিন পারবেন— এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই।

করোনাভাইরাস আতঙ্কের বৃত্তে বন্দি হয়ে যখন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানা, তখন চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রিপেইড সিস্টেমের আওতায় থাকা গ্রাহকদের ব্যালেন্স শেষ হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট বিদ্যুত অফিসে দৌড়াতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বলছেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকেই অঘোষিত লকডাউনে রয়েছে নিত্যদিনের জীবনযাত্রা। এই অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। যানচলাচল নেই বললেই চলে। দোকানপাটও প্রায় বন্ধ। অথচ প্রিপেইড সিস্টেম মিটারের রিচার্জের জন্য ঠিকই বের হতে হচ্ছে গ্রাহকদের। অগ্রিম রিচার্জ না হলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ।

ঢাকায় যেখানে গ্রাহকবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, চট্টগ্রাম তার ঠিক উল্টো। ঢাকায় হলেও চট্টগ্রামে জরুরি পরিস্থিতিতেও রির্চাজ সিস্টেমে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য একটিই— ‘পরিস্থিতি সাপেক্ষে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

হাতগোনা কিছু রিচার্জ এজেন্টের দোকান এখনও খোলা দেখা গেলেও রিচার্জ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তারাও বাধ্য হবেন দোকান গুটিয়ে রাখতে। তখন আরো বেশি বিপাকে পড়বেন চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। জরুরি পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তুতি কী— এমন প্রশ্নের উত্তরে কর্মকর্তারা বলছেন ‘বিদ্যুতের অফিস তো খোলাই আছে।’

গ্রাহকরা বলছেন, এলাকার কাছাকাছি যেসব দোকান থেকে তারা রিচার্জ করেন সেসব রিচার্জের বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ রয়েছে ২৬ মার্চের পর থেকে। ফলে রিচার্জের জন্য দূরবর্তী দোকানগুলোতে যেতে হচ্ছে গ্রাহকের। এর ওপর যানচলাচল প্রায় বন্ধ। সড়কে চলছে ‘পুলিশি’ শাসন। এমন অবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসে যেতেও বিড়ম্বনায় পড়ছেন গ্রাহকরা।

এমন বিড়ম্বনার মুখ থেকে ফিরে আসা বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা অর্পিতা দাশ বলেন, ‘রিচার্জের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু যে দোকান থেকে রিচার্জ করি সেটি বন্ধ। পরে বিদ্যুৎ অফিসে গেলাম। কিন্তু আসার পথে দিদার মার্কেটের ওইখানে দেখলাম পুলিশ রাস্তায় দাঁড়াতেই দিচ্ছে না।’

এমন জরুরি পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক ঘরে বসে কিভাবে প্রিপেইড মিটারে কার্ড রিচার্জ করবেন কিংবা ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স বাড়ানোর কোন সিদ্ধান্ত আছে কিনা জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) দক্ষিণাঞ্চল, চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, ‘শোনেন আমাদের বিদ্যুৎ অফিসগুলা খোলা আছে। তাই গ্রাহকের কোন সমস্যা হচ্ছে না।’ সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এইটা যখন হবে, তখন আমরা বিকল্প চিন্তাভাবনা করবো।’

এএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!