জটিল হচ্ছে লড়াই, করোনার থাবায় চট্টগ্রামের ১৯ চিকিৎসক

পিপিই-মাস্ক মানসম্মত কিনা সেই প্রশ্নও উঠছে

পিপিই (পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট), ডাবল মাস্ক, ডাবল গ্লাভসসহ পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের হৃদরোগ বিভাগের এক ডাক্তার। গত ৬ মে ওই ডাক্তারের সাধারণ জ্বর হয় এবং তিনদিনের মাথায় তিনি পুরোপুরি সুস্থও হয়ে যান। উপসর্গ নেই, তবুও সন্দেহের জেরে হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের চাপে গত ৯ মে করোনার পরীক্ষা করান। ১৩ মে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ওই ডাক্তারের করোনা পজিটিভ আসে।

সাধারণ জ্বর ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ না থাকায় ওই চিকিৎসক করোনার পরীক্ষা করাতেও রাজি ছিলেন না কিন্তু করোনা রিপোর্ট আসার পর হতবাক চিকিৎসক নিজেই।

ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। মন্ত্রণালয় থেকেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দেওয়া হচ্ছে পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস।

কর্তৃপক্ষ বলছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু রোগীদের উপসর্গ না থাকায় ‘কে করোনার বাহক’ তা অনুমান করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং পিপিইর যথাযথ ব্যবহারবিধি না জানার কারণেও চিকিৎসকরা সংক্রমিত হচ্ছেন বলে ধারণা করছেন কর্তৃপক্ষ।

তবে ধারণা যাই হোক, আক্রান্ত চিকিৎকের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলছে। প্রায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেও বিএমএ’র (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) দেয়া তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৯ জন চিকিৎসক করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৩ মে একদিনেই চারজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের দুজনই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তার পরদিন আবার ১৪ মে আরও দুজন চিকিৎসক করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন। যাদের একজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের। সর্বশেষ ১৫ মে একজন এবং ১৬ মে আরও চারজন চিকিৎসক করোনার থাবায় আটকে গেছে।

করোনায় আক্রান্ত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার কোনো লক্ষণ নাই। গত বুধবার থেকে শুক্রবার হালকা জ্বর ছিল। তারপর থেকে পুরো স্বাভাবিক। যেহেতু মেডিকেলে রোগী দেখি তাই স্যার বলায় করোনা পরীক্ষা করালাম। কাল রাতে পজিটিভ দেখে সব উলটপালট লাগছে। আমার এখনও কোনো উপসর্গ নাই। আমি সুস্থ আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি পিপিই আমি ব্যবহার করেছি। ডাবল মাস্ক, ডাবল গ্লাভস পরেছি। মেডিকেল আর বাসা ছাড়া আর কোথাও যাইনি। এতো প্রটেকশন নেওয়ার পরেও আমি করোনা পজিটিভ হলাম? এখন আমার পরিবারের জন্য ভয় হচ্ছে ভীষণ।’

এ প্রসঙ্গে বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গাউনটা তো পিপিই না। আপনি যতই বলেন পিপিই দেওয়া হচ্ছে, এগুলো মানসম্মত কিনা সে প্রশ্ন থাকছে। মাস্ক নিয়েও প্রশ্ন আছে। কাঙ্খিত এন-৯৫ মাস্ক এখনও দেওয়া হয়নি। গাউনের চেয়ে বেশি জরুরি মাস্ক। নাক, চোখ, মুখ— এ তিন মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করে। এখন যে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে সেটা কতটা কার্যকর তা নিয়েই শংকিত আমরা।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের অসাবধানতাবশত হতে পারে অথবা অন্য রোগী তার লক্ষণ নাই কিন্তু সে করোনা আক্রান্ত হলে তার সংস্পর্শে কিন্ত ডাক্তাররা সংক্রমিত হবে। যেমন কার্ডিওলজি বিভাগে কোনো করোনা রোগী রাখবে না। এখন হতে পারে কোনো রোগী করোনা আক্রান্ত, না হয় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। আর তা না হলে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী যারা আছে, যেমন ওয়ার্ডবয়। তাদের যদি পর্যাপ্ত সুরক্ষা না থাকে, তাদের মাধ্যমে ডাক্তাররা সংক্রমিত হতে পারে।’

সুরক্ষা সরঞ্জাম থাকার পরেও চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত কিভাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের যে সুরক্ষা সামগ্রী আছে সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। শুধু পরলেই হয় না। এগুলো খোলার যথাযথ নিয়ম ব্যবহার করতে হবে। পরা যত না সহজ, খোলা কিন্তু কঠিন। যদি ঠিকমত না খোলা হয় তাহলে ইনফেক্টেড হয়ে যেতে পারে। সেগুলো যথাযথ মানা হচ্ছে না বলে ডাক্তাররা পজিটিভ হচ্ছেন। প্রথমত আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং এগুলোর ব্যবহারবিধিও জানতে হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!