জঙ্গি মুক্তির মিশনে দুবাই থেকে এসেছিলেন চট্টগ্রামের আতিকুল্লাহ

নতুন করে সংগঠিত হচ্ছিল হরকাতুল জিহাদ

জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি আল বাংলাদেশের (হুজিবি) কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তির কাজে দুবাই থেকে দেশে এসেছিলেন সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ নেতা চট্টগ্রামের আতিকুল্লাহ ওরফে আসাদুল্লাহ ওরফে জুলফিকার। দুবাই থেকে দেশে ফেরার সাত মাস পর তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানা যায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি আল বাংলাদেশ (হুজিবি) নতুন করে সংগঠিত হচ্ছিল।

হরকাতুল জিহাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এতোদিন নানা ধারণা করা হলেও আতিকুল্লাহ গ্রেপ্তার হওয়ার পর মিলেছে সুনির্দিষ্ট নানা তথ্য। হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাস আইন ২০০০ এর অধীনে একটি নির্দিষ্ট সংস্থা। বাংলাদেশের ১৪টি স্থানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যায় এই সংগঠনটিকে দায়ী করা হয়।

আতিকুল্লাহ হরকাতুল জিহাদের প্রথম সারির নেতা। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল্ ইসলামিয়ায় পড়ার সময় মাওলানা আব্দুল সালাম, মুফতি আব্দুল রউফ, হাফেজ ইয়াহিয়াদের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদে যোগ দেন তিনি। এরপর তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আতিকুল্লাহ হুজি নেতা মুফতি হান্নানের ১৯৯৬ সালে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে বায়তুল মাল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল নেতা ছিলেন। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম দিকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে সৌদি আরব পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন। সাংগঠনিক কাজে একাধিকবার তিনি পাকিস্তানেও যান। আতিকুল্লাহর পরিচিতি রয়েছে বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবেও।

আতিকুল্লাহ আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধেও অংশ নেন। ওই সময় তিনি তালেবান প্রধান মোল্লা ওমর এবং আল কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

গত ২ অক্টোবর ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ৮ অক্টোবর ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হরকাতুল জিহাদের এই নেতা জানান, গত মার্চে তিনি দুবাই থেকে বাংলাদেশে আসেন। তার দেশে ফেরার মূল লক্ষ্য ছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি আল বাংলাদেশের (হুজিবি) কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তির জন্য চেষ্টা চালানো। আর এই কাজে তাকে দুবাইপ্রবাসী মুফতি শহিদুল ইসলাম। দুবাই থেকে দেশে ফেরার আগে ফেব্রুয়ারিতে মুফতি শহিদুলের সঙ্গে বৈঠক হয় আতিকুল্লাহর। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, একটি কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে হরকাতুল জিহাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হবে।

জবানবন্দিতে আতিকুল্লাহ জানান, দুবাইয়ে বসে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি আল বাংলাদেশ (হুজিবি)-কে সংগঠিত করছেন মুফতি শহিদুল ইসলাম। আশির দশকের শেষ দিকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসেন মুফতি শহিদুল ইসলাম। তিনি ২০০১ সালে নড়াইল-২ আসন থেকে উপ-নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের (অবিভক্ত) সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৮৮ সালে প্রথম আল মারকাজুল ইসলামি বাংলাদেশ নামে এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন মুফতি শহিদুল ইসলাম। কিন্তু এর আড়ালে তিনি হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুটি এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। এর একটি মুফতি শহিদের মারকাজ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত আন্তর্জাতিক এনজিও ‘আদ্রা’ ও ‘আল-মারকাজুল ইসলামি’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা এবং ২৫ আগস্ট উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়া মাঠের মহাসমাবেশে টি-শার্ট, গেঞ্জি সরবরাহের অভিযোগ উঠার পর তাদের শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্প নয়, সারাদেশের কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। একইসঙ্গে এই দুটি এনজিওর সব ধরনের ব্যাংক লেনদেন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!