ছয় দফা দাবিতে রাস্তায় পাটকল শ্রমিকরা, বিজেএমসি অফিস ঘেরাও

পেটে ভাতে মিলছে না চট্টগ্রামের পাটকল শ্রমিকদের। বরাবরের মত বুধবার (৩ মার্চ) দাবি দাওয়া নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছে। দুপুর ১২টায় ছয় দফা দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ বিজেএমসি’র আঞ্চলিক কার্যালয় ঘেরাও করে কর্মসূচি পালন করেছে পাটকল রক্ষায় শ্রমিক কৃষক-ছাত্র-ঐক্য চট্টগ্রাম। পরে তারা বিজেএমসি আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে একটি স্মারকলিপি দেন।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বন্ধ সকল পাটকল চালু ও পিপিপি-লিজ না দেওয়া, বদলি শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা, ২০১৯ সালে সকল বকেয়া সপ্তাহ পরিশোধ করা, বদলি শ্রমিকদের লকডাউনের মজুরি পরিশোধ করা, অবসায়নকৃত বদলি শ্রমিকদের নোটিশ পে-মজুরি পরিশাধ করা, শ্রমিক নেতা রুহুল আমিনের নিঃশর্ত মুক্তি এবং পাটকল নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাটকল বদলি শ্রমিক সংগঠনের নেতা কামাল উদ্দীন, শ্রমিক কৃষক ছাত্র জনতা ঐক্যের আহ্বায়ক আমীর আব্বাস, সংগঠক সত্যজিৎ বিশ্বাস, বাসদ (মার্কসবাদী) পাঠচক্র ফোরামের নেতা অপুদাশ গুপ্ত, গণমুক্তি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন নাসু।

বক্তারা বলেন, দীর্ঘ আটমাস পার হলেও এখনো বদলি শ্রমিকেরা তাদের পাওনা বুঝে পায়নি। সরকার বা বিজেএমসি পক্ষ থেকে কোন সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ বেকার শ্রমিকেরা আজ দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে। তাদের কাজ নেই, সন্তানদের শিক্ষা জীবন বন্ধ, বিনা চিকিৎসায় অনেক মারা যাচ্ছে। বক্তারা অবিলম্বে বদলি ও দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান।

তারা বলেন, পাটকলের হাজার হাজার একর জমি দখল এবং যন্ত্রপাতি লুটের জন্য পাটকলগুলো বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা শ্রমিকেরা মেনে নিবে না।
অবিলম্বে সকল পাটকল চালুসহ ৬ দফা দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।

জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই অর্থ পরিশোধের ঘোষণা দেওয়া হলেও এখনও তার প্রস্তুতি দৃশ্যমান না হওয়ায় এই উদ্বেগ তাদের। প্রভিডেন্ট ফান্ড (এফ), গ্রাচ্যুইটি, মজুরি কমিশনের বকেয়া, মৃত্যু বীমার দাবিসহ খাতওয়ারি ন্যায্য পাওনা মিলবে কি-না সেটি নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তারা।

ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল মন্ত্রণালয় থেকে। সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শ্রম আইন অনুযায়ী নোটিশ মেয়াদের অর্থাৎ ৬০ দিনের মজুরি, চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য গ্রাচ্যুইটি, পিএফ তহবিলে জমাকৃত অর্থ এবং নির্ধারিত হারে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধা পাবেন শ্রমিকরা।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, প্রতি শ্রমিক সর্বনিম্ন ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। একই সাথে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবসরে যাওয়া ৮ হাজার ৯৫৬ জন শ্রমিক ও বদলি শ্রমিকদের সমুদয় পাওনাও এই সঙ্গে পরিশোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। শ্রমিকের পাওনার অর্ধেক নগদ এবং বাকি অর্ধেক তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, এই দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের জীবন কাটছে খেয়ে, না খেয়ে। তারা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান। একই সাথে যেসব দাবিতে তাদের রাস্তায় নামা সেটির বাস্তবায়ন চান বিক্ষোভরত শ্রমিকরা।

আইএমই/কেএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!