ছেলে নিখোঁজ, স্বামী খুন: আট বছর আগের পচা লাশ বলল খুনি ছিল নিজের ঘরেই

‘বিদেশে যাওয়া’ স্বামীর লাশ ভেসে উঠল ঘরের পুকুরে

চট্টগ্রামের রাউজানে আট বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য অবশেষে উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। নিহত ব্যক্তি ছিলেন একজন প্রবাসী, যিনি নিখোঁজ হয়ে যান ২০১৭ সালে। রোববার (৪ মে) তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকা তার স্ত্রীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—নিহত নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪২), একই এলাকার জসিম উদ্দিন (৫২) এবং নোয়াখালীর আবুল কালাম (৪৭)। তাদের মধ্যে নাছিমা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে জানিয়েছে সিআইডি।

পচাগলা লাশ, সুগন্ধি আর এক চাপা গন্ধের গল্প

২০১৭ সালের ১৮ জুলাই, রাউজানের দক্ষিণ সর্তা এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুরে পাওয়া যায় একটি বস্তাবন্দি পচাগলা অজ্ঞাত লাশ। পুকুরে ভাসমান বস্তাটি প্রথমে কুকুরের লাশ বলে ভেবে সরিয়ে ফেলেন স্থানীয়রা। কিন্তু বস্তা ছিঁড়ে কাক বের করে আনে মানুষের হাড়—মুহূর্তেই চাঞ্চল্য ছড়ায় পুরো এলাকায়।

নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় তখন পুলিশ লাশটি আনজুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করে। কিন্তু পরে এক নিখোঁজ ডায়েরি ও ডিএনএ পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়, মৃত ব্যক্তি হচ্ছেন সেই সময় নিখোঁজ হওয়া প্রবাসী নাজিম উদ্দিন।

মায়ের হাতে স্বামী হত্যা, সন্তান নিখোঁজ

সিআইডি জানায়, হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল পারিবারিক কলহ। ঘটনার সময় নাজিম উদ্দিন হঠাৎ দেশে ফিরে স্ত্রী নাছিমার সঙ্গে ঋণ নেওয়া, বাজার করা এবং আগে নিখোঁজ হওয়া সন্তান নিয়ে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পড় দিলে, ক্ষুব্ধ নাছিমা তাকে ধাক্কা দেন। মাথা লোহার দরজার কাঠামোয় আঘাত পেয়ে নাজিম ঘটনাস্থলেই মারা যান।

পরবর্তীতে নাছিমা লাশ কম্বল ও তোষকে মুড়িয়ে ঘরের কোণে রাখেন। ছড়িয়ে পড়া গন্ধ ঢাকতে সুগন্ধি ব্যবহার করেন এবং সন্তানদের বলেন, ‘তোমাদের আব্বা বিদেশে চলে গেছেন।’ পরে বিদেশি কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেন এবং মেয়েদের বাইরে পাঠিয়ে সহযোগীদের সহায়তায় লাশ মুরগির খাবারের বস্তায় ভরে ফেলে দেন পাশের পুকুরে।

১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি, তিনজনই গ্রেপ্তার

নাছিমাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাকি দুই সহযোগী জসিম ও আবুল কালামকেও গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

চট্টগ্রাম সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরার তত্ত্বাবধানে পরিদর্শক নাছির উদ্দিন রাসেলের নেতৃত্বে তদন্তকারী দল এই আট বছর ধরে ঝুলে থাকা মামলাটির রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হন।

পারিবারিক দ্বন্দ্বই কারণ

পরিদর্শক নাছির উদ্দিন রাসেল বলেন, ‘এটি ছিল এক জটিল পারিবারিক ট্র্যাজেডি। একজন নিখোঁজ সন্তানের শোক, আর্থিক টানাপোড়েন ও দাম্পত্য দ্বন্দ্বের মধ্যে হঠাৎ ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ও দীর্ঘ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি।’

এখন আট বছর আগের সেই চাপা গন্ধ, সুগন্ধি দিয়ে ঢাকা এক নৃশংস ট্র্যাজেডির পর্দা উঠে গেছে। সন্তান হারানোর বেদনা আর স্বামীর খুনের গোপন ইতিহাস—সবই এখন পুলিশের জবানবন্দিতে উন্মোচিত।

জেজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm