ছেলের ফল জালিয়াতি করে ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক’ নারায়ণ ওএসডি, হচ্ছে মামলাও
২০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ২১৮!
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হয়েও নিজের ছেলের ফলাফল জালিয়াতি করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্রনাথকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। তার ছেলে নক্ষত্র দেব নাথের ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতি তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। এতে জড়িত থাকার দায়ে নারায়ণ চন্দ্র নাথসহ জালিয়াতিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শতরুপা তালুকদার স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক চারটি আদেশ জারি করা হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, জনাব নারায়ণ চন্দ্র নাথ, পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল, চট্টগ্রাম এর পুত্র নক্ষত্র দেব নাথ এর ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার (বিজ্ঞান বিভাগ; রোল ১০৮৫৫৪) ফলাফল জালিয়াতি তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত বিষয়ে জনাব নারায়ণ চন্দ্র নাথ, পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল, চট্টগ্রাম এবং এই জালিয়াতিতে তার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
একই তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, জনাব নারায়ণ চন্দ্র নাথ, পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল, চট্টগ্রাম, সাবেক সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম -এর বিরুদ্ধে আনীত তার পুত্র নক্ষত্র দেব নাথের ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার (বিজ্ঞান বিভাগ; রোল ১০৮৫৫৪) এর ফলাফল জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযুক্তের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, কর্মস্থল, চাকুরিতে যোগদানের তারিখ, বেতন স্কেল, আহরিত বেতন-ভাতা ও ই-মেইল ঠিকানা উল্লেখপূর্বক সুনির্দিষ্টভাবে খসড়া অভিযোগনামা ও অভিযোগবিবরণীসহ আলাদা ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন (পিডিএস) আগামী ০৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
ফলাফল জালিয়াতি
২০২১ সালের এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফলাফলে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সেখানে দেখা গেছে, কয়েকজন শিক্ষার্থী ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় নির্ধারিত নম্বরের চেয়েও বেশি নম্বর পেয়েছে। এছাড়া দুপুরে ফল প্রকাশের পর পর ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরফর্দ সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ পাল্টে যায়। ওই বছর চট্টগ্রাম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়া এক শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দে দেখা গেছে, পদার্থবিজ্ঞানে মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে তার প্রাপ্ত নম্বর লেখা রয়েছে ২১৮! একই ঘটনা ঘটেছে ওই শিক্ষার্থীর উচ্চতর গণিতের বিষয়েও। আরও একাধিক শিক্ষার্থীর নম্বরফর্দে এমন অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের ক্ষেত্রে এমন নম্বর পাল্টে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এসব ঘটনায় ২০২২ সালের ১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত চিঠিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দায়ী করা হয়।
পরে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে ওই সময়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের ফলাফল নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে অংশ নেয় তার ছেলে নক্ষত্র দেব নাথ। পরে অভিযোগ ওঠে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে জিপিএ-৫ পাইয়ে দিয়েছেন নারায়ণ নিজে। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হয়। তাতে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়।
সিপি