ছিঁড় ধরেছে মাতামুহুরীর ড্যামে, ঝুঁকিতে চকরিয়ার ১৪ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ
মিঠা পানিতে মিশে যাচ্ছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি
কারিগরি দিক না মেনে ও আনাড়ি শ্রমিক দিয়ে রাবার ব্যাগ ফোলানোয় ছিঁড়ে গেছে চকরিয়ার পালাকাটা রাবার ড্যামের একটি স্প্যান। এতে সামুদ্রিক জোয়ারে ঢুকে সয়লাব হয়ে পড়ছে মিঠা পানির একমাত্র উৎস মাতামুহুরী নদীর ওই অংশটি। এর ফলে চকরিয়ার অন্তত ৩০ হাজার একর জমির বোরো চাষ হুমকির মুখে পড়ে গেছে।
জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে কক্সবাজারের চকরিয়ার উপকূলীয় আটটি ইউনিয়নের অন্তত ১৪ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা হয় প্রায় ১৭০ মিটার দীর্ঘ একটি রাবার ড্যামে (রাবার ব্যারেজ) আটকানো মিঠা পানি দিয়ে। কিন্তু মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা-রামপুর পয়েন্টে নির্মিত সেই রাবার ড্যামটির ভেতর পানি ঢুকিয়ে ফোলানোর সময় তিন স্প্যানের একটির রাবার ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে। ১৫ বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেয়ারটেকারকে বাদ দিয়ে কেন সাধারণ শ্রমিক দিয়ে কেন রাবার ব্যাগ ফোলানো হলো— এ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
এদিকে চলতি শুস্ক মৌসুমে ইরি-বোরো চাষাবাদে নামার মুহুূর্তে মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা-রামপুর পয়েন্টের ড্যামের রাবার ব্যাগ ছিঁড়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অর্ধ লক্ষাধিক কৃষক পরিবারের মাঝে। এই পরিস্থিতিতে উপকূলীয় আটটি ইউনিয়ন তথা চিরিঙ্গা, সাহারবিল, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বিএমচর ও বদরখালীর অন্তত ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধার মিঠা পানি পাওয়ার উৎস পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়ে গেছে।
২০১৩ সালে মাতামুহুরী নদীর সেচ প্রকল্পের আওতায় (২য় পর্যায়) প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা ও পালাকাটা-রামপুর পয়েন্টে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এই দুই ড্যামের রাবার ব্যাগ ফুলিয়ে উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানি ধরে রেখে প্রতিবছর চকরিয়া ও পেকুয়ার প্রায় ৭০ হাজার একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা (এসও) আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ড্যামটির রাবার ব্যাগের তিনটি স্প্যানের ভেতর পানি ঢুকিয়ে ফোলানোর কাজ শুরু করা হয়। মাটিকাটার স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে এই কাজ করানো হয়। কিন্তু তারা ওই কাজে আনাড়ি হওয়ায় আগে থেকে চাপা পড়া মাটি অপসারণ না করেই রাবার ব্যাগের ভেতর পানি ঢোকানো শুরু করে। এর একপর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে তিন নম্বর স্প্যানের রাবার ব্যাগটির অন্তত ১৫ ফুট অংশ ছিঁড়ে যায়। এরপর থেকে সামুদ্রিক জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি মাতামুহুরী নদীর মিঠা পানির সঙ্গে মিশতে থাকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাতামুহুরী নদীতে নির্মিত রাবার ড্যাম দুটির সার্বিক তদারকি করার জন্য প্রশিক্ষিত কেয়ারটেকার নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু সেই কেয়ারটেকারকে না নিয়ে শাখা কর্মকর্তা (এসও) মাটি কাটার শ্রমিক নিয়ে রাবার ড্যামটি ফোলানোর কাজ শুরু করে। এতেই সর্বনাশ ঘটে যায় এই ড্যামটির।’
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন জানান, মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা-রামপুর পয়েন্টে নির্মিত এই রাবার ড্যামের আটকানো মিঠা পানি দিয়ে প্রতি শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ১৪ হাজার হেক্টর জমির সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু ইরি-বোরো মৌসুমের মোক্ষম সময়ে রাবার ড্যামটির রাবার ব্যাগ ছিঁড়ে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় কৃষকেরা আতঙ্কে রয়েছেন। অতিসত্ত্বর এই ড্যামটির ছিঁড়ে যাওয়ার রাবার ব্যাগ মেরামতের মাধ্যমে পুরোপুরি সচল করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের পওর বিভাগের শাখা কর্মকর্তা (এসও) আরিফুল ইসলাম দাবি করেছেন, মূলত সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপের কারণেই ড্যামটির তিনটি স্প্যানের একটির রাবার ব্যাগের কিছু অংশ ছিঁড়ে যায়। তবে ছিঁড়ে যাওয়া অংশ দ্রুততার সাথে মেরামত করার জন্য তারা কাজ করছেন। অবশ্য কবে নাগাদ ড্যামটি সম্পূর্ণ পূর্বাবস্থায় ফেরাতে পারবেন তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বর্তমানে দায়িত্বে নেই বলে জানান। তবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি এও বলেন, ‘ড্যামের রাবার ব্যাগ ছিঁড়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। সেটি মেরামত করা হচ্ছে বলেও জেনেছি।’
সিপি