ছাদ বন্ধ দেখে চট্টগ্রামে ইংলিশ মিডিয়ামের সেই তরুণীকে সিঁড়িতেই ধর্ষণ

প্রেম ছিল দুজনের— দাবি অভিযুক্ত তরুণের পরিবারের

চট্টগ্রামে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইংলিশ মিডিয়ামের ও-লেভেল পড়ুয়া যে ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাদের দুজনের মধ্যে গত ৩-৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল— এমন দাবি করেছে ধর্ষণের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া তরুণের পরিবার। এছাড়া যে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণের অভিযোগকে ‘নাকচ’ করে দেওয়ার কিছুক্ষণের মাথায় সেই আইডিটি হঠাৎ ‘ডিঅ্যাকটিভ’ করে দেওয়া হয়।

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম নিজেই বলেছেন ছেলেটি তাকে কথা বলার ছলে একটা বিল্ডিংয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে এবং পরে ধর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিমের বন্ধুকেও মারধর করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর ওআর নিজাম আবাসিকের একটি ভবনের ছাদে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার পরিবারের দায়ের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি থেকে আজমাইন আজিম আয়ান (২২) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, কোচিংয়ে যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীকে প্রায়ই উত্যক্ত করত ছেলেটি। এটা নিয়ে ওই তরুণের বাবার কাছে অভিযোগও জানায় ছাত্রীর পরিবার। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। বুধবার বিকেলে মেয়েটি কোচিংয়ে গেলে তাকে কৌশলে একটি ভবনের ছাদে নিয়ে যায় ছেলেটি। সেখানে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়।

তবে আয়ানের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধর্ষণ নয় মূলত বান্ধবীকে ইয়ামিন নামে এক ছেলের সাথে দেখার পর ওই ছেলের সাথে আয়ানের বাকবিতন্ডা ও মারামারি হয়। দুজনের মারামারি থামাতে গিয়ে তরুণীও আঘাত পান। তবে ধর্ষনের কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায়ও ইয়ামিনকে মারধরের কথা উল্লেখ রয়েছে।

তবে আয়ানের ভাই সানবির আজিম গালিব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আয়ানের সাথে মেয়েটির ৩-৪ বছর ধরে রিলেশন চলছিল— এটা দুই পরিবারের সবাই জানতো। আর উনারা মামলায় লিখেছেন আয়ান তাকে ইভটিজিং করতো। ঘটনার ব্যাপারে আমি যদ্দুর জানতে পেরেছি মূলত মেয়েটিকে অন্য একটা ছেলের সাথে দেখে সেখানে রাস্তাতেই তাদের মধ্যে এক ধরনের হাতাহাতি হয়।’

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে আয়ানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ভিকটিম তরুণীর আইডি থেকে ইংরেজিতে এক স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। যা অনেকটা এই রকম— ‘সবার কাছে একটা বিনীত অনুরোধ মিথ‍্যা ধর্ষণের নাটক সাজানো থেকে বিরত থাকুন। এমন কিছুই ঘটেনি এবং যা বলা হচ্ছে নিতান্তই মিথ্যা ছাড়া কিছু না। সুতরাং তার বিষয়ে গুজব রটানো থেকে বিরত থাকুন। ধন্যবাদ।’

কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিকটিম তরুণীর আইডি ডিঅ্যাক্টিভেটেড করে দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে জানতে আয়ানের কয়েকজন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে। তাদের দাবি দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল কয়েক বছর ধরেই। এমনকি প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ নিজের হাতে আয়ানের নামে ট্যাটুও করিয়েছেন ওই তরুণী।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আয়ান ও তার পরিবারের দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে ভিকটিম তরুণীর পিতা ও মামলার বাদী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার আইডি থেকে কে কী পোস্ট করেছে আমার জানা নাই। আমি ইন্টারনেটের ব্যাপারে খুব একটা বুঝি না। তাছাড়া আপনি যেগুলো বলছেন সেসব ঠিক নয়।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার উপ পরিদর্শক এনামুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভিকটিম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে আছে। মেডিকেল টেস্টের পর আমরা সিদ্ধান্তে যেতে পারবো ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম আমাকে নিজে বলেছে ছেলেটি তাকে কথা বলার ছলে একটা বিল্ডিংয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে এবং পরে ধর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিমের বন্ধু ইয়ামিনকেও মারধর করে আয়ান।’

তিনি বলেন, ভিকটিমের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী যে ভবনে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেটির ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। তখন দরজার মুখে সিঁড়িতেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে ভিকটিম যখন সেখান থেকে নিচে নেমে এসে আয়ানের দুই বন্ধুকে ঘটনা জানায়, তখন তারা এটা নিয়ে হাসাহাসি করছিল। সেই দুজনও এই মামলার আসামি।’

মামলার এজাহারসূত্রে জানা গেছে, এই দুই বন্ধুর একজনের নাম লালখানবাজারের তারেক আজিজ এবং অন্যজন মোকারম হোসাইন। দুজনের বয়সই ২২ বছর।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!