কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় একটি বৌদ্ধবিহারের পাশে লাগোয়া রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় এক চাকমা যুবকের সাথে ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতাদের তর্কাতর্কির জের ধরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এই ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
রোববার (২৪ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে টেকনাফ উপজেলার কাটাখালী অরণ্য বৌদ্ধ বিহার এলাকায় এই সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বরাত দিয়ে টেকনাফ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ইভটিজিংয়ের জেরে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে স্থানীয় মুসলিম যুবকদের তর্কাতর্কির জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী আরো ৫ জনকে মেরে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মুসলিম যুবকদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজ সকালে চাকমা পাড়ার পাশে এক যুবক ছিনতাইয়ের শিকার হয়। সেটার খোঁজখবর নিতে গেলে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েলের সাথে এক চাকমা ছেলের বাদানুবাদ হয়। সেখান থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত।’
টেকনাফ থানা সূত্রে জানা যায়, কাটাখালী এলাকায় বেলা ১১টার দিকে কিছু মুসলিম যুবক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী স্থানীয় চাকমা মেয়েদের ইভটিজিং করে। এই ঘটনার জেরে স্থানীয় চাকমারা মুসলিম ছেলেদের কাছে কারণ জানতে গেলে মুসলিম যুবকরা ক্ষিপ্ত হয়ে চাকমা যুবকদের মারধর ছাড়াও স্থানীয় বৌদ্ধবিহারের রান্নাঘরে ভাংচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
ঘটনার বিষয়ে টেকনাফ ১ নম্বর হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় এলাকায় ছিলাম না। বর্তমানে আমি কক্সবাজার থেকে এলাকায় যাচ্ছি। কথাকাটাকাটির জেরে স্থানীয় বৌদ্ধদের সাথে মুসলিম যুবকদের মারামারি এবং বৌদ্ধমন্দিরের রান্নাঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত এলাকায় গেলে জানতে পারব।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে বৌদ্ধমন্দিরের পাশে একটি রান্নাঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জন বৌদ্ধ নারী পুরুষ গুরুতর আহত হয়েছেন।’
আহতদের চিকিৎসার জন্য টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন আহত হয়েছেন।
তবে এই বিষয়ে একেবারেই ভিন্ন বক্তব্য ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাদের। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সকাল ৭ টার দিকে একজন আমার কাছে আসে। তার কাছ থেকে দুটো বাস্কেটসহ মোবাইল টাকা পয়সা ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে— এমন অভিযোগ নিয়ে। আমি তখন সেখানকার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েলকে বিষয়টি দেখতে বলি।’
তিনি বলেন, ‘পরে আমি আর বিষয়টি তদারকি করিনি। তোফায়েল সেখানে যাওয়ার পর এক চাকমা ছেলের সাথে তার বাদানুবাদ হয়। ছিনতাইয়ের ঘটনা মীমাংসা করতে গিয়ে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে একটা হাতাহাতি হয়েছে। কিন্তু এরপর যে আগুনের কথা বলা হচ্ছে তার সাথে ওই ঘটনার তো কোনো সম্পর্ক নাই। ঘটনাকে ভিন্নখাতে মোড় দিতে কেউ এটা করছে বলে মনে হচ্ছে।’
এআরটি/বিএস/সিপি