চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির একটি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের ৯ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠনের পরদিন তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন।
রোববার (৭ মে) উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেন তারা।
পদত্যাগ করা তিন নেতা হলেন পারভেজ উদ্দিন সোহেল, মো. তৈয়ব এবং জাহাঙ্গীর আলম। তাদের মধ্যে পারভেজ উদ্দিন সোহেল ও মো. তৈয়বকে নতুন কমিটির সহ-সভাপতি এবং মো. জাহাঙ্গীর আলমকে নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
পদত্যাগ করা তিন নেতার অভিযোগ, নতুন কমিটিতে নিজেদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে ছাত্র রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছে। মাঠের রাজনীতিতে না থাকাদেরও কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া নতুন কমিটির একাধিক সদস্য এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। একইসঙ্গে যুবলীগের কমিটিতে থাকা একজনকেও ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
পারভেজ উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। সবসময় সব প্রোগ্রামে সামনের সারিতে ছিলাম। গত ১৯ মার্চে ইউনিয়নে সম্মেলন হয়েছিল। তখনই এই পকেট কমিটির বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছিল। সম্মেলনের এতদিন পর এসে কমিটিতে দেখি সেই কমিটিই, যেটা সম্মেলনের ৩ থেকে ৪ দিন আগে ছড়িয়ে পড়েছিল।’
ছাত্রলীগের এই নেতার দাবি—বয়স, পড়াশোনা ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জ্যেষ্ঠ হয়েও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এখনো উচ্চ মাধ্যমিক পাশ না করা কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পরিবারতন্ত্রে আটকা পড়েছে এই কমিটি। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের পূর্বের কমিটির সভাপতির ভাইকে করা হয়েছে নতুন কমিটির সভাপতি।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ করা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সম্মেলনে আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। আমি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলাম দীর্ঘদিন। আমি প্রাণ বাজি রেখে সংগঠনের জন্য কাজ করে আসছি। কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র মেন্টেইন করা হয়নি, দলীয় গঠনতন্ত্রও মানা হয়নি, যুবলীগের দায়িত্বে আছে এমন ছেলেকে দায়িত্বে নিয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘দাঁতমারাবাসীর দাবি ছিল, কমিটি যেন পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসে। সম্মেলনের আগে যেটা ছড়িয়ে পড়েছিল, এখন দেখি সেই কমিটিই গঠন করা হয়েছে। তাই এসব কারণে কমিটি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা সজ্ঞানে এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী ছিলাম, আছি, থাকব।’
সহ-সভাপতির পদত্যাগ করা আরেক নেতা মো. তৈয়ব বলেন, ‘এর আগের কমিটিতে আমি গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। এবারের সম্মেলনে আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। কিন্ত আমাকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করেছি। তবে আমি নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিতে চাই, আমি শেখ হাসিনার একজন কর্মী ছিলাম, আছি এবং থাকব।’
তবে পদত্যাগকারীদের অভিযোগের বিষয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নতুন কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে সে মেধাবী ছাত্র। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার ভাইও দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পারিবারিক সবকিছু যাচাই-বাছাই করার পর তাকে যোগ্য মনে হয়েছে। আরা সাধারণ সম্পাদকের নামে নাকি হত্যা মামলা আছে, আসলে তার নামে মামলা নেই, তবে পারিবারিক শত্রুতার জেরে তার বাবার নামে মামলা আছে।’
উচ্চ মাধ্যমিক শেষ না করা ছেলেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মিথ্যা, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ না করা কেউ নেই। যার কথা বলা হচ্ছে সে অনার্সে পড়ে।’
যুবলীগের সদস্যকে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যার কথা বলা হচ্ছে, সে আসলে যুবলীগের সদস্য না। তবে ইউনিয়ন যুবলীগে একই নামে আরেকজন সদস্য আছে।’
মো. জামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটা বৃহৎ সংগঠন, এই সংগঠনে সবাই দায়িত্ব নিতে চায়। আমরাও যোগ্য, মেধাবীদের দায়িত্ব দিতে চাই। কিন্তু সবাইকেতো আর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানাতে পারব না।’
বিএস/ডিজে