ছাত্রলীগের কমিটিতে ভর করছে সন্ত্রাসী-বিবাহিত-অছাত্র, বিতর্ক ছাড়ছে না ইমু-দস্তগীরকে

সম্মেলন ছাড়া কমিটি করতে পারবে না চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ-এমন নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক কমিটি করে যাচ্ছে নগর ছাত্রলীগ।

এসব কমিটিতে স্থান পেয়েছে হত্যা মামলার আসমি, বিবাহিত, চিহ্নিত মাদকসেবী, অছাত্র ও বিতর্কিতরা।

এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের বড় একটি অংশকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি করা, ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে নিজেদের পছন্দের মানুষকে নিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

এসব অভিযোগ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে একাধিকবার জানিয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু তবুও ‘মন গলেনি’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। যার ফলে এখনো বহাল তবিয়তে আছে মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর কমিটি।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরে নেতাকর্মীরা জানান, এই কমিটির ২৯১ জনের মধ্যে প্রায় ৭০ জন বিবাহিত, অছাত্রের সংখ্যা প্রায় ১৭০ জনের উপরে।

২০১৩ সালে গঠিত এই কমিটির অধিকাংশের বয়স ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত বয়সসীমা ছাড়িয়ে গেছে। এর পরও মেয়াদোত্তীর্ণ, বিতর্কিত এই কমিটি বিভিন্ন সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ শনিবার (১৪ মে) কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের অনুমোদন দেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

একইসাথে নগর কমিটির সহ সম্পাদক হিসেবে কিশোর গ্যাং লিডার শৈবাল দাশসহ আরও পাঁচ জনের নাম অন্তর্ভূক্ত করে ইমু-দস্তগীর। এছাড়া আরেক সহ সম্পাদক সৈয়দ আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদকসেবনের অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও ফুটেজ আছে তার।

যদিও নগর কমিটিতে সহ সম্পাদক অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলছেন, নগর ছাত্রলীগের কমিটিতে কাউকে সংযুক্ত করার ক্ষমতা আছে একমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এভাবে কাউকে মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন না। এটি গঠনতন্ত্র বিরোধী।

এই অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ক্ষমতাকে খর্ব করা হিসেবে দেখছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। অতীতে এমন কোনো নজির নেই বলেও জানান তারা।

এদিকে কোতোয়ালী থানা কমিটিতে সহ সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া রুবেল দত্ত জামালখানের আলোচিত ছাত্রলীগ কর্মী আসকার বিন তারেক (ইভান) হত্যা মামলার আসামি।

একই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়া ইমরান হোসেন সাজেন বিবাহিত। তার বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও সাজেনের দাবি, তিনি বিয়ে করেননি। ছবিটি এডিট করে প্রচার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সদ্য সহ সম্পাদক হওয়া কিশোর গ্যাং লিডার শৈবাল দাশের বিরুদ্ধে সিএমপির কোতোয়ালী থানায় বেশ কয়েকটি মামলা ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। শৈবালের অনুসারীদের ছুরিকাঘাতে ২০ এপ্রিল জামালখানে ছাত্রলীগর কর্মী আসকার বিন তারেক (ইভান) নিহত হয়। ইভান হত্যার পর থেকে কিশোর গ্যাং লিডার শৈবাল দাশ পলাতক রয়েছে। যদিও ইভান হত্যা মামলায় তার নাম নেই বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরে দীর্ঘদিন ধরে থানা কমিটি নাই। যার কারণে কমিটি দেওয়া হয়েছে। আমার জানা মতে তারা (ইমু-দস্তগীর) কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে কমিটি গঠন করেছে।’

হত্যা মামলা ও বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে এই ধরণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলে আমাদেরকে দিতে হবে। প্রমাণ পেলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব। অভিযোগ যে কেউ করতে পারে। কিন্তু সেটার প্রমাণ থাকতে হবে।’

নগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ সম্পাদক অন্তর্ভুক্ত করার প্রসঙ্গে প্রদীপ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সভাপতি, সম্পাদকের অনুমতি সাপেক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তারা হয়তো অনুমতি নিয়ে অন্তর্ভুক্ত করছেন।’

এ বিষয়ে জানতে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!