ছাত্রদল নেতার ‘গ্যাং’ চট্টগ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সমানে অপহরণ-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস
দামপাড়া ঘিরে মুক্তিপণ আদায়ের বড় চক্র
চট্টগ্রামে এক ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বাধীন গ্যাং আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে পুরো চট্টগ্রাম নগরজুড়ে। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে ‘গডফাদার’ নেতাদের পক্ষ হয়ে সশস্ত্র শোডাউনের অভিযোগ। এর আগে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছিল, গত ৫ আগস্টের পর থেকে ওই ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে নগরীর খুলশী এলাকা ঘিরে।
তিনি চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব নুর আলম সোহাগ। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সদস্যসচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনের অনুসারী। তুহিন আবার বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের অনুসারী। অন্তত তিনটি ঘটনায় সোহাগ ও তার বাহিনীর হাতে পাহাড়তলী থানা লুটের অস্ত্র দেখেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে।
রাতদুপুরে পিস্তল হাতে গুলি
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় একদল অস্ত্রধারী নিয়ে প্রকাশ্যে গোলাগুলি করে আতঙ্ক ছড়ান ছাত্রদল নেতা নুর আলম সোহাগ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাজীর দেউড়ি দুই নম্বর গলি এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র বের করে গুলি ছোঁড়েন সোহাগ। এ সময় তার সহযোগী ছিলেন আরও কয়েকজন। পরে স্থানীয়রা এর মধ্যে দুজনকে আটক করে পুলিশে দেন। তবে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান সোহাগ। সোহাগসহ আটক দুজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পুলিশ তাদের পকেট থেকে ৪ রাউন্ড ৭.৬৫ এমএম বুলেট উদ্ধার করে। জানা গেছে, অস্ত্রধারীদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তির অনুসারী হিসেবে পরিচিত ইসমাইল সরকার নামে একজনকে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার দুজন হলেন কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার ৬নং বিটিশ্বর ইউপির মৃত মোহাম্মদ তারা মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ খুরশেদ আলম (৪২)। তিনি বর্তমানে গরীবুল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটির ৭ নম্বর রোডের আকবরের বিল্ডিংয়ে থাকেন। অপরজন কুমিল্লার মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন (২৯)। তিনি পাঁচলাইশ মোহাম্মদপুরের বক্করের বিল্ডিংয়ে থাকেন।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে কাজীর দেউড়ি দুই নম্বর গলি এলাকায় শাহজাহান নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তির (লাশের) গোসল দেওয়ার জন্য পাশের বিল্ডিংয়ের নিচে খাটিয়া রাখতে চান স্বজনরা। এ নিয়ে মৃত ব্যক্তির ভাই মোশারফ হোসেনের সাথে পাশের ভবনের আবুল ফয়েজের পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুই পরিবারের সমঝোতায় লাশের গোসল দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। এরই মধ্যে রাত আড়াইটার দিকে সেখানে আসেন খুলশী থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নুর আলম সোহাগ। তার উপস্থিতিতে আরেক দফায় বাকবিতণ্ডা চলে। এর এক পর্যায়ে সোহাগ পকেট থেকে অস্ত্র বের করে গুলি ছোঁড়েন।
এ ঘটনায় বুধবার (১১ ডিসেম্বর) কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল নোমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনও পলাতক রয়েছেন সোহাগ।
এসআই আবদুল্লাহ আল নোমান এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে আটক দুজনের কাছ থেকে চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। অন্যদিকে যে গুলি ছোঁড়া হয়েছে, সেটার খোসা উদ্ধার হয়েছে।’
ঘটনায় জড়িত নুর আলম সোহাগকে গুলি ছোঁড়া অবস্থায় সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে— এমন কথা উল্লেখ করে এসআই নোমান বলেন, ‘তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
যার বাড়ির নিচে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেই বাড়ির মালিক বাগমনিরাম ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল ফয়েজ এ প্রসঙ্গে বলেন, মঙ্গলবার পাশের ভবনের এক ব্যক্তি মারা যান। লাশের গোসল দেওয়ার জন্য জায়গা দিতে একটু দেরি হয়। গাড়ি সরাতে দেরি হওয়ায় এটা নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়। সেটা সমাধানও হয়ে যায়। কিন্তু পরে নুর আলম সোহাগ এসে আবার তর্কবিতর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে তিনি অস্ত্র বের করে গুলি ছোড়েন।
তবে গুলি ছোঁড়ার কথা অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতা নুর আলম সোহাগ শনিবার রাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি সিগারেট খাই। তাই একটা লাইটার সবসময় আমার পকেটে থাকে। পিস্তলের মতো দেখতে। ওরা আমাকে মারতে আসার পর সেই লাইটার দেখিয়ে আমি শুধু ভয় দেখিয়েছি। তারা মনে করছে, ওটা পিস্তল।’
সোহাগ দাবি করেন, ‘আমার কাছে অস্ত্র যদি থাকে, তাহলে মৃতের ভাইয়ের কাছে কেন বুলেট থাকবে? কারও গায়ে গুলি লাগলো না কেন? এটা আসলে ওরাই সাজিয়েছে।’
শাড়িসহ গাড়ি ছিনতাই, চাঁদার টাকায় কক্সবাজার
গত ২০ নভেম্বর রাত সাড়ে সাতটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় আড়ংয়ের সামনে থেকে একটি ছোট পিকআপ (ঢাকা মেট্রো-ন ১৯৫৩৬৮) আটকে দেয় একদল যুবক। চালক ছাড়া ওই গাড়িতে যাত্রী ছিলেন শুধু একজন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্রে সজ্জিত যুবকদের ওই দলটি গাড়িটিকে প্রথমে জিইসি মোড় এলাকার জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকায়। এসব অস্ত্রের মধ্যে নগরীর পাহাড়তলী থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্রও ছিল। এর ১০ মিনিট পর গাড়িটি সেখান থেকে বের করে এনে রাখা হয় গরীবুল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটির সামনে। ঘন্টাখানেক পর সোসাইটির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে গাড়িটি থেকে সাত বস্তা মালামাল নামানো হয়। পরে গাড়িটিকে ওই হাউজিং সোসাইটির আট নম্বর সড়কের একটি ভবনের নিচে রাখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শাড়িসহ গাড়ি ছিনতাইয়ের পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে খুলশী থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নূর আলম সোহাগের নেতৃত্বে। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন ১৪ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ টুকু মোল্লা, সাইদুল ইসলাম, শাহাজাহান, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ রাজু ওরফে বরিশাইল্ল্যা রাজু, মোহাম্মদ হোসাইন প্রকাশ কালু, মোহাম্মদ শামীম ওসমান ও সোহেল।
নূর আলম সোহাগ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে দাবি করেছেন, এমন কোনো ঘটনার কথা তার জানা নেই। ‘গাড়িটিতে কি অবৈধ কিছু ছিল’— এমন প্রশ্ন করে সোহাগ বলেন, ‘যারা এমন ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন, তারা কারা?’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই নম্বর গেইট থেকে ধরে আনা গাড়িটিতে ছিল ফেনী সীমান্ত দিয়ে আনা চোরাচালানের শাড়ি। এটি ছিল টেরিবাজারের এক ব্যবসায়ীর চালান। কোনো এক মাধ্যমে গাড়িটি আসার খবর আগে থেকেই জানতেন ছাত্রদল নেতা সোহাগ। ঘটনার রাতেই ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। অনেক দেনদরবারের পর শেষ পর্যন্ত তিন লাখ টাকা চাঁদা দেওয়ার পর শাড়ি বহনকারী পিকআপটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে শাড়ির বস্তাগুলো রেখে দেওয়া হয়।
চাঁদার তিন লাখ টাকা নিয়ে পরে দলের সবাই কক্সবাজারে বেড়াতে যায়। যদিও ছাত্রদল নেতা নূর আলম সোহাগ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, তিনি কক্সবাজার যাননি।
কলেজের ভেতর গুলি, নেতার মাথায় পিস্তল
গত ১৮ নভেম্বর ওমরগণি এমইএস কলেজে প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে গুলি ছোঁড়েন নুর আলম সোহাগ। এ ঘটনায় পুরো কলেজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সোহাগকে এ নিয়ে প্রশ্ন করলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘এমইএস কলেজ তো আমার ইউনিটের মধ্যে পড়ে না। সেখানে আমি কেন যাবো?’
সোহাগ এমন দাবি করলেও গত ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এমইএস কলেজ ছাত্রদল আয়োজিত এক মানববন্ধনে তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে।
অভিযোগ মিলেছে, সম্প্রতি নগরীর দামপাড়া ইউনিক কাউন্টারের সামনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির এক যুগ্ম আহ্বায়কের আত্মীয়ের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেন নুর আলম সোহাগ। পরে বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা ঘটনাটির মীমাংসা করে দেন বলে জানা গেছে।
অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের বড় চক্র, দামপাড়ায় টর্চার সেল
চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকায় নুর আলম সোহাগসহ অন্তত দুজন শীর্ষ ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিভিন্নজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। নগরীর ভেতরেই ব্যস্ততম এলাকায় তারা গড়ে তুলেছে রীতিমতো টর্চার সেল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকে গত কয়েক মাসে সেখানে বহু লোককে ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে— এমন তথ্য জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে। প্রটেকশনের বিনিময়ে এর ভাগ পান নগর ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতাও।
গত ৩০ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে থেকে মিরসরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গিয়াস উদ্দিনকে একদল সশস্ত্র যুবক সেন্ট্রাল প্লাজার পাশের গলির ভেতরে একটি ভবনের নিচের তলায় সিঁড়ির পাশে ছোট্ট একটি রুমে আটকে রাখে। এ সময় অস্ত্রধারী যুবকরা সাবেক পৌর মেয়র গিয়াসের গলায় ধারালো ছুরি ধরে প্রথমে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় তারা গিয়াসের পকেটে থাকা ৩৫ হাজার টাকাসহ দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। ওইদিন বিকেল পৌনে চারটার দিকে ওই কক্ষে আসেন খুলশী থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নুর আলম সোহাগ। তিনি আসার কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় সহযোগী যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘একটু পর আমাদের দলীয় প্রোগ্রাম আছে। এরে আপাতত এখানে তালা মেরে রাখ।’ সন্ধ্যা সাতটার দিকে অস্ত্রধারী যুবকরা ফিরে এসে সাবেক পৌর মেয়র গিয়াসের মুখে কাপড় ও হাত রশি দিয়ে বেঁধে সিএনজিচালিত একটি ট্যাক্সিতে তোলে। সেই ট্যাক্সি গিয়ে থামে দামপাড়া গ্রিনলাইন বাস সার্ভিসের কাউন্টারের সামনে। ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কাউন্টারের পেছনে বাস রাখার মাঠে একটি কড়ই গাছের নিচে। গিয়াসকে সেখানে ব্যাপক মারধর করা হয়। এর মধ্যে এক যুবক পিস্তল ঠেকিয়ে গিয়াসের মাথায় গুলি করে। তবে গুলির বিকট শব্দ হলেও গুলি বের হয়নি। ছাত্রদল নেতা নুর আলম সোহাগ মারধরের পুরো সময়টায় নিজে উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
ঘটনার শিকার গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে যখন গ্রিনলাইন কাউন্টারের পেছনের মাঠটিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সেখানে এক কোণায় আরও দুজনকে দেখেছি, যাদের দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা ছিল। চোখও তাদের কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা। আমাকে তারা একটি কড়ই গাছের নিচে নিয়ে বসায়। এরপর এমনভাবে তারা আমাকে মেরেছে আমার পরনের কাপড়চোপড়ও ছিঁড়ে যায়।’
গ্রিনলাইন কাউন্টারের পেছনের সেই মাঠে অনেকগুলো অস্ত্রও দেখেছেন গিয়াস উদ্দিন। এর মধ্যে দুটি শাটারগানে চট্টগ্রাম নগরীর ‘পাহাড়তলী থানা’র নাম লেখা ছিল। গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এগুলো সরকার পতনের পর থানা থেকে লুট করা অস্ত্র হতে পারে। দুটি পিস্তলও দেখেছি।’
এরই মধ্যে গিয়াসের পরিবারের সদস্যরা চকবাজার থানা ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর ইলিয়াস ফেরদৌসকে ঘটনাটি জানান।গ্রিনলাইন কাউন্টারের পেছনে অস্ত্রধারীরা ব্যাপক মারধর করার পর গিয়াস উদ্দিনের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। নইলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। রাত আটটার দিকে সেখানে ঢোকেন মিরসরাই পৌর যুবদলের সদস্যসচিব বোরহান উদ্দীন সবুজ। এর পরপরই মুক্তিপণের টাকার অংক আরও ১০ লাখ বেড়ে ৩০ লাখ টাকায় ওঠে যায়।
ওইদিন রাত ৯টার দিকে গিয়াসের পরিবার থেকে দাবি করা টাকার একাংশ জোগাড়ের কথা জানানোর আধঘন্টা পর সিএনজি ট্যাক্সি করেই জিইসি মোড়ে অবস্থিত ‘কাচ্চি এক্সপ্রেসে’র দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয় গিয়াসকে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গিয়াস উদ্দিনের স্বজনরা নগদ ১৫ লাখ টাকা জোগাড় করে নিয়ে আসে। খুলশী থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নুর আলম সোহাগের উপস্থিতিতে সেই টাকা গোণা হয় জিইসি মোড়ের পশ্চিম পাশের পুলিশ বক্সের ভেতরে। সেখান থেকে মোবাইলে টাকা বুঝে পাওয়ার বার্তা যায় গিয়াসের পাশে বসে থাকা এক যুবকের মোবাইলে। এর পরপরই মুক্তি মেলে গিয়াস উদ্দিনের। রাত ১১টার দিকে পরিবারের কাছে ফিরে যান তিনি।
অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের এই চক্রে সোহাগসহ ২০ থেকে ২৫ জন জড়িত থাকলেও অন্তত দুজনকে শনাক্ত করেছেন গিয়াস উদ্দিন। ওই দুজন হলেন— বরিশাল কলোনির রাজু এবং জাহাঙ্গীর ওরফে টুকু মোল্লা।
তবে ছাত্রদল নেতা বরিশাল কলোনির রাজু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ওই সময় বলেন, ‘আমাকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করতেছে হয়তো। রাজনৈতিকভাবে আমাদের বিভিন্নজনের সাথে সমস্যা থাকতে পারে। সেটার জন্য এখানে ফাঁসানোর চেষ্টা করতে পারে। তবে আমি এ ধরনের কোনো কাজে জড়িত ছিলাম না।’
বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার হস্তক্ষেপে এ ঘটনায় নুর আলম সোহাগের বিরুদ্ধে দলীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তও তারা প্রভাব খাটিয়ে থামিয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সোহাগ এরপর আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন।
প্রকাশ্যে-আড়ালে গডফাদার যারা
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা নুর আলম সোহাগের সব চাঁদাবাজি থেকেই ভাগ পান। এর বিনিময়ে ওই নেতা সোহাগকে দলীয় ‘প্রটেকশন’ দিয়ে থাকেন— এমন অভিযোগ করেছেন মহানগর বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতা। জানা গেছে, নগর ছাত্রদলের ওই শীর্ষ নেতা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের লংমার্চে ঢাকা থেকে আখাউড়া যাওয়ার কথা থাকলেও গত মঙ্গলবার কাজির দেউড়ি এলাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনা সামাল দিতে আখাউড়া না গিয়ে তড়িঘড়ি চট্টগ্রামে চলে আসেন। পরে তিনি চট্টগ্রামের বাসিন্দা এক কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় গিয়ে ধরনা দেন ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য।
জানা গেছে, নুর আলম সোহাগের বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্টের পর থেকে একের পর এক অভিযোগ উঠলেও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতার পাশাপাশি বিএনপির ওই কেন্দ্রীয় নেতা তাকে নানাভাবে রক্ষা করতে সচেষ্ট ছিলেন। মূলত তার প্রশ্রয় পেয়েই সোহাগ ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন— এমন কথা বলছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা।
সিপি