ছয় ভাইসহ এস আলমের সব একাউন্টের তথ্য চায় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা

স্ত্রী, দুই ছেলে ছাড়াও তালিকায় আরও তিনজন

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও ছয় ভাইসহ মোট ১৩ জনের ব্যাংক হিসাবের সব ধরনের তথ্য চেয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ। একই সঙ্গে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে পরিচালিত হিসাব ও অন্যান্য তথ্যও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে হিসাব চাওয়া একজন, এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০২০ সালের ২২ মে।

রোববার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ) সব ব্যাংকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।

ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাংক দখল, ঋণের নামে অর্থ লুটপাট এবং অর্থ পাচারসহ অনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওই সব ব্যক্তির নিজ বা যৌথ নামে কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে পরিচালিত হিসাব, লকার ও সঞ্চয়পত্রের তথ্য, যেমন হিসাব খোলার ফরম, গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য বা কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদির সফট কপি এবং তাদের জামানত ও ঋণ পরিশোধের তথ্যসহ ঋণ হিসাবসংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করে যেসব ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের সব ধরনের তথ্য তলব করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা, তারা হলেন— এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫৯৬২৪৬৭৯৪৯), তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৪১৬১৮৮৪৫১৭) এবং দুই ছেলে—আহসানুল আলম (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৪৬১০৪৩৯৩৭৬) ও আশরাফুল আলম (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ২৪১৫৪৫২৬৫২)।

সাইফুল আলম মাসুদের ছয় ভাইয়ের তথ্যও চেয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা। এই ছয় ভাই হলেন— মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫০৬২৪৭০০০৯), ওসমান গনি (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৯৫৫৬২৩৪৩৯২), আবদুস সামাদ লাবু (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৫৯৫৭০৮৫৭০৫৭২), রাশেদুল আলম (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৬৮৬২৪৬২৭৪১), সহিদুল আলম (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৬৮৬২৯০২২০৯) ও মোরশেদুল আলম (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৫০৬২৪৭৪১৩৪)। এর মধ্যে মোরশেদুল আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০২০ সালের ২২ মে।

এছাড়া হামিদুর রহমানের ছেলে মিসকাত আহমেদ (৫০৬৩৩১২৭৩৯), আবুল কাশেমের মেয়ে ফারজানা বেগম (৪৬১১৮৮০৩৪৪) ও ফেরদৌসুল কবিরের মেয়ে শাহানা ফেরদৌস রয়েছেনও তালিকায়। এই তিনজনও এস আলম পরিবার সংশ্লিষ্ট।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ও ঋণ হিসাবের তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে, যৌথ নামে বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের নামে কোনো লকার ও সঞ্চয়পত্রের তথ্য থাকলে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে।

বিএফআইইউর কর্মকর্তারা জানান, এস আলম গ্রুপ ব্যাংক খাত থেকে মোট কত টাকা ঋণ হিসেবে বের করেছে, সেটি বের করতেই ব্যাংক হিসাব ও ঋণ হিসাবের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে এস আলম গ্রুপের সুবিধাভোগী ১৮ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব ও ঋণ হিসাবের তথ্যও জানতে চেয়েছে বিএফআইইউ। তারা হলেন প্রশান্ত কুমার দাস, মো. হেলাল, বদিউর রহমান, আবদুল করিম, সৈয়দ আলম, মো. হাছান, নুরুল আলম, আবদুল কুদ্দুস, দিল মোহাম্মদ, আলী আহম্মেদ, মো. সাকের মিয়া, আলমগীর ফয়সাল, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আলম, সামছুল আলম, মো. ইউনুছ, নুরুল আফসার, মো. শাহজাহান আনছারী।

গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির তদন্ত শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য একটি তদন্ত দল গঠন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। গত জুন মাসে এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পান ভ্যাট কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো চট্টগ্রামের এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড।

একই দিন এস আলম পরিবারের সদস্যসহ ২৫ ব্যক্তি ও ৫৬ প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা ৬ ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm