চোরাগ্যাসের বেচাকেনায় বাড়ছে দুর্ঘটনা, ঠকছে গ্রাহকও

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্রস ফিলিংয়ের মাধ্যমে এলপি গ্যাস চুরির ঘটনা বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে বড় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে কিংবা ছোট সিলিন্ডার হতে চুরি করা হচ্ছে গ্যাস। চুরি করা এসব গ্যাস খালি সিলিন্ডারে ভর্তি করে ব্যবসা করছে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। এতে গ্রাহকদের ঠকিয়ে কিছু বাড়তি আয় হলেও ঘটছে দুর্ঘটনাও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি সিলিন্ডার থেকে গড়ে ২ লিটার করে গ্যাস কম দিয়ে ১৫০-২০০ টাকা বেশি মুনাফার আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি অসৎ চক্র এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের পটিয়া বাইপাস সড়ক সংলগ্ন গ্যাসচোর টিপুর অবৈধ গোডাউনে গ্যাস ক্রস ফিলিং করার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একজন নিহত ও পাঁচজন দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রতারক চক্রটি ঘটনাটি প্রথমে মোবাইল চার্জার বিস্ফোরণে হয়েছে বলে প্রচার করলেও ফায়ার সার্ভিস বিস্ফোরক টিমের তদন্তে বেরিয়ে আসে গ্যাস সিলিন্ডারে অবৈধভাবে ক্রস ফিলিং করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সূত্র জানায়, পটিয়ায় একাধিক প্রতারকচক্র এভাবেই এলপি গ্যাস সিলিন্ডার হতে ক্রস ফিলিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস চুরি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা এ অবৈধ বাণিজ্যটি করতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে ব্যবহার করছে বলেও জানা গেছে।

খুচরা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান জানান, ছোট সিলিন্ডারে কোম্পানিভেদে ১২-১৩ কেজি গ্যাস থাকার কথা। খুচরা পর্যায়ে গ্যাস সিলিন্ডার ওজন করে বিক্রি করা হয় না। সাধারণ ক্রেতারা বিশ্বাস করে কিনে নিয়ে যান আমাদের থেকে। যখন গ্যাস সিলিন্ডারটি নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়ে যায় তখনই বুঝতে পারেন তারা ঠকেছেন। এতে করে আমাদের মতো খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দুর্নাম হচ্ছে এসব অসৎ ডিলার ব্যবসায়ীদের কারণে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শুধু পটিয়ায় নয় এ প্রতারক চক্রটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা রাস্তার মাথা, গাছবাড়িয়া খাঁন হাট, বাগিচাহাট, দোহাজারী, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, কর্ণফুলী উপজেলার কলেজ বাজার, মাস্টার হাট, পুরাতন ব্রিজঘাট, মইজ্জ্যারটেক, পটিয়ার বৈলতলী সড়ক, স্টেশন রোড, ভট্টাচার্য হাট, দারোগা হাট, আমজুর হাট, শান্তির হাট, সফর আলী মুন্সির হাট, বোয়ালখালীর ফুলতল, অলি বেকারি, হাজির হাট, কানুনগো পাড়া, শাকপুরা চৌমুহনী এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারের ক্রস ফিলিংয়ের অভিনব কায়দায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, এই অসাধু চক্রটি ৩৫-৪০ কেজি ওজনের সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে রেগুলেটরের মাধ্যমে গ্যাস স্থানান্তর করছে। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে প্রায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই। সম্প্রতি চন্দনাইশ, লোহাগাড়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় অবৈধ ক্রস ফিলিং করার সময় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, ২৩ জুলাই পটিয়ার গ্যাসচোর টিপুর গোডাউনে গ্যাস চুরির সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পটিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইনামুল হাছান।

ইনামুল হাছান জানান, মোহছেন আউলিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের গোডাউনে ক্রস ফিলিংয়ের ব্যবসা করে আসছে কয়েক বছর ধরে। খবর পেয়ে আমরা তিন জনকে আটক করে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছি মালিক ফরহাদুল ইসলাম প্রকাশ টিপুকে। এসময় গোডাউনটিও সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে গ্যাসসিলিন্ডারের এক খুচরা ক্রেতা বলেন, ‘একটা খালি সিলিন্ডারের ওজন ১২.৯ কেজি। সাথে ১২ কেজি গ্যাসসহ ২৪.৯ কেজি ওজন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি সিলিন্ডারের ওজন ২২.৩৭ কেজি। প্রায় ২.৫ কেজি গ্যাস কম! এভাবেই প্রতারিত হচ্ছি আমরা।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সহকারী বিস্ফোরণ পরিদর্শক মেহেদী ইসলাম খান জানান, সারা দেশের সাতটি স্থানে বৈধভাবে গ্যাস ক্রস ফিলিংয়ের সুযোগ আছে। চট্টগ্রামেও তিনটি ক্রসফিলিং প্লান্ট স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বৈধ প্লান্ট ছাড়া বিপজ্জনকভাবে এ ধরনের অবৈধ ক্রস ফিলিংয়ের কোন সুযোগ নেই। তবে একটা অসাধু চক্র অবৈধভাবে ক্রস ফিলিংয়ের মাধ্যমে সিলিন্ডারে গ্যাস কম দিয়ে গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে। আবার এ কাজ করতে গিয়ে নিজেরাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

তিনি বলেন, তবে দক্ষিণ চট্টগ্রামে অবৈধভাবে ক্রস ফিলিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো। এ ধরনের অপরাধের সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বলে জানান এ বিস্ফোরক কর্মকর্তা।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm