চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে ২৪টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ চোর চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের রেকর্ডে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারে সবচেয়ে বড় অভিযান এটি।
শনিবার (২৫ মার্চ) দিনভর অভিযানে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ ৫ জনকে চট্টগ্রাম বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন মিঠন ধর (২৯), মোঃ বাবর ওরফে বাবুল (৩৫), মোঃ শাহেদ (২৬), মোঃ রিপন (৪০), মোঃ খোরশেদ আলম (২৯)। এদের মধ্যে মিঠন ধর ও খোরশেদ আলম লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদের স্থায়ী বাসিন্দা। বাকি তিনজন সন্দ্বীপের।
গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫০টি চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে চোর চক্র। দালাল মারফত ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে সন্দ্বীপ পাঠানো হয় এসব মোটর সাইকেল, ভাগ পান জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
এনিয়ে রবিবার (২৬ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের মোটর সাইকেল চুরি হয়। ওই চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আন্তজেলা চোর চক্রের সন্ধান পাই আমরা। শনিবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দ্বীপ থেকে ম. শামসুল ইসলামের মোটর সাইকেলসহ থেকে ২৪টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। সবগুলোই চোরাই মোটর সাইকেল।
চক্রটি কুমিল্লা থকে কক্সবাজার এলাকা পর্যান্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটর সাইকেল চুরি করে সন্দ্বীপে বিক্রি করে আসছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে তারা এই কাজ করছে। চার ধাপে এই চক্রটির সদস্যরা কাজ করে। এর মধ্যে প্রথম দলের সদস্যরা চুরি করে দ্বীতীয় দলের লোকদের দেয়। তারা সেটি তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। তারা সেটা সন্দ্বীপে পৌছে দেয়। সন্দ্বীপে সেসব মোটর সাইকেল সাধারণ মানুষের মাঝে বিক্রি করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আরও অন্তত ৫০টি মোটর সাইকেল তারা এভাবে বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছে। আমাদের ধারণা সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি।
পুলিশের উপ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় সক্রিয় আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করছি।’
তবে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বরাত দিয়ে অভিযানে থাকা একজন উপ পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিটি গাড়ি সন্দ্বীপ পৌছানোর জন্য দালালের মাধ্যমে চুক্তি হয়। ১০ হাজার টাকা করে দালালদের দেওয়া হয়। এই টাকা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়।‘
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপ পরিদর্শক মেহেদী হাসান শুভ বলেন, ‘উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ঘাট দিয়ে উদ্ধার হওয়া ২৪টি মোটর সাইকেল সন্দ্বীপ পৌঁছানো হয়েছে। ঘাট কর্তৃপক্ষের অসচেতনতাও এখানে একটি বড় বিষয়। ওই অঞ্চলে আরও অসংখ্য চোরাই মোটরসাইকেল রয়েছে। দূর্গম এলাকা হওয়ায় তাৎক্ষণিক অনেকগুলো মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যৎ অভিযান পরিচালনা করে আরও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ), নোবেল চাকমা, সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) অতনু চক্রবর্তী ও কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির।
আরএম/এমএফও