চেম্বারের ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্য মেলা বন্ধ হচ্ছে মন্ত্রীর নির্দেশে

দেশের সকল বাণিজ্য মেলা বন্ধ ঘোষণা করা হল অবশেষে। সোমবার (১৬ মার্চ) রাতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ ঘোষণা দেন। এতে বলা হয়, সোমবার হতে দেশের সকল নগর, মহানগর, জেলা, উপজেলাসহ সকল স্থানে চলমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপ্রাপ্ত সকল প্রকার বাণিজ্য মেলা বন্ধ ঘোষণা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল মেলা বন্ধ থাকবে।

এর আগে করোনা ঝুঁকিতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। ঝুঁকি এড়াতে এর মধ্যে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধও ঘোষণা করেছে সরকার। এই পরিস্থিতির মধ্যেও চট্টগ্রামে দিব্যি চলছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। যদিও এই মেলা বন্ধে বা পরিসর সীমিত করতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্টকে পরামর্শও দিয়েছিলেন তবে এখন পর্যন্ত সেই পরামর্শ আমলে নিয়ে কোন পদক্ষেপও নিতে দেখা যায়নি মেলা কর্তৃপক্ষকে। এদিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকও জানিয়েছেন মেলা বন্ধ করতে এর মধ্যে চেম্বারকে অনুরোধ করেছেন তিনি। আর চেম্বার নেতারা বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে তারা। অবশেষে সোমবার রাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত আসলো।

মেলা কর্তৃপক্ষের এমন আচরণকে ভালভাবে দেখছেন না চট্টগ্রামের স্থানীয়রা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ মেলা নিয়ে ক্ষোভের কথা বলছেন অনেকেই। অনেকে বলছেন মেলা না থামালে চট্টগ্রামে করোনা ছড়াতে এ মেলা খুব নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। জনস্বার্থে মেলা বন্ধের দাবিও তুলছেন অনেকে। আরিফুল ইসলাম নামে একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ‘বাণিজ্য মেলা স্থগিত করা দরকার। একজন দুইজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মেলায় প্রবেশ করে তাহলে পুরো চট্টগ্রাম ইতালির মত হয়ে যাবে।’

বাণিজ্য মেলা বিষয়ে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক অবস্থান সত্বেও কেন এই মেলা? কী ভাবছেন মেলার আয়োজকরা— এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে সোমবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ জামাল আহমেদের সাথে।

তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের এরকম কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি যে মেলা বন্ধ করতে হবে। যেমন স্কুল কলেজ বন্ধ করতে বলে নাই। আমাদেরও মেলা সম্পর্কে আমাদের কোন নির্দেশনা দেয়নি। যদি নির্দেশনা আসে আমরা চিন্তা করে দেখবো, সরকারের বিরুদ্ধে তো আমরা কোন কাজ করতে পারবো না।’

করোনা ঝুঁকির বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ জামাল বলেন, ‘আমরা এখন বলতেসি যে সবাই পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে চলবে। সবাই রেস্টুরেন্টে হাত ধুয়ে বসবে মানে প্রাথমিক সর্তকতা আমরা পালন করতেছি আর কি। তবে জনগণের তো তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নাই, মানুষ তো (মেলায়) আসতেছে।’

‘সরকারের পক্ষ থেকে মেলার বিষয়ে আসলেই কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি?’— এমন প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দ জামাল বলেন, ‘না আমি বলি, আমাদের যদি বলে আমরা কি সেটা না শুনে পারবো। আপনি জানেন আমি মেলার চেয়ারম্যান? সুতরাং বললে তো আমাকে বলবে। এবং আমরা সেখানে সজাগ দৃষ্টি রাখছি সরকারি কোন নির্দেশনা আসছে কিনা, জনগণের চাহিদা কি এইগুলা নিয়ে আমরা সবসময় চিন্তা করি। চেম্বার থেকে আমাদের আগামী পরশু মিটিং আছে। সেখানে আলাপ করবো।’

এসব বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এইটা চেম্বারের প্রেসিডেন্টকে বলা হচ্ছে। এটা আসলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হচ্ছে তো, আমরা এটা বন্ধ করতে পারছি না। এখানে আমাদের পারমিশন প্রয়োজন হয়না। এই কারণেই আমি তাদেরকে রিকুয়েস্ট করেছি যে মেলা বন্ধ করার জন্য। আর উপজেলা পর্যায়ে কোন মেলা চললে আমরা সেগুলা বন্ধ করে দেব।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে সরকারি সিদ্ধান্ত যেটা সেটাকে আমরা অনার করবো। আমি কমার্স মিনিস্ট্রির সাথে কথা বলছি। উনারা যেভাবে ড্রাইভ করবে আমরাও সেভাবে থাকবো। কারণ শুধু চিটাগাংয়ে না, …খুলনায়ও চলতেছে বাণিজ্য মেলা, সিলেটও চলতেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তো যে সময় যেটা হবে কারণ এটা হলো ন্যাশনাল প্রবলেম। এটা চট্টগ্রামের প্রবলেম না ঢাকার প্রবলেম না, জাতীয় প্রবলেম, বিশ্ব প্রবলেম কাজেই এখানে বাড়াবাড়ি করার কিছু নাই। যেটাই ভালো হবে সেটাই করতে হবে।’

এআরটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!