চুয়েটের স্বাধীনতা ভাস্কর্য জানান দিচ্ছে গৌরবের ইতিহাস

বীরত্বের বিশালতা আর অসীম সাহসিকতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন বীরপুরুষ। হাতে রাইফেল। শাড়ির আঁচলকে নিশানরূপে ধরে আকাশপানে চেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে বিজয়লক্ষী নারী। তরুণ উদ্যমে সাথে দেখা যাচ্ছে এক মধ্যবয়সী কিশোর।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) স্বাধীনতা চত্বর ঠিক এভাবেই সাজানো না বলা গল্পকথায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই ঠিক সোজাসুজি চোখে পড়ে এই স্বাধীনতা ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের গৌরবজ্জ্বল বিজয় ও ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে নির্মাণ করা হয় এই দৃষ্টিনন্দন স্বাধীনতা ভাস্কর্যটি।

চুয়েটের স্বাধীনতা ভাস্কর্য জানান দিচ্ছে গৌরবের ইতিহাস 1

ভাস্কর্যটির নিচের অংশে বেইজমেন্টে চোখে পড়ে প্রায় ১২০ ফুট টেরাকোটার কারুকার্য। যাতে বোঝানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কিছু চিত্র। এর মধ্যে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণসহ আরও নানা বিষয়।

চুয়েট ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের ঠিক পাশেই এই নান্দনিক কারুকর্মের ভাস্কর্যটি অবস্থিত। ভাস্কর্যটিতে রয়েছে মূল চারটি ফিগার। বীরত্ব আর সাহসিকতা নিয়ে দাঁড়ানো সেই দুই পুরুষ ফিগার বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সাহসী-সংগ্রামী চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে।

বিজয়লক্ষী নারী ফিগারের আঁচল বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি নারীদের অদম্য সাহসকিতা ও পুরুষের সাথে থেকে সাহস যোগানোসহ শাশ্বত প্রকৃতি তুলে ধরেছে। তার ঠিক পাশেই দাঁড়ানো অদম্য কিশোর ফিগারে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ তুলে ধরা হয়েছে। মূলত পুরো ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টিকে প্রতিনিধিত্ব করছে।

প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিলো দৃষ্টিনন্দন এই স্বাধীনতা ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির নকশা করেন চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সজল চৌধুরী ও নুসরাত জান্নাত।

চুয়েটের স্বাধীনতা ভাস্কর্য জানান দিচ্ছে গৌরবের ইতিহাস 2

চুয়েটের শিক্ষার্থী ইফফাত হক নিশান বলেন, ভাস্কর্যগুলো আসলে এক একটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মে সেই গৌরবময় ইতিহাসকে অমর করে রাখে।

পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাকামে মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাঙালির প্রতিবাদ, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, ত্যাগ-তিতীক্ষা, গতি, উদ্যম, বীরত্ব, গণহত্যাসহ স্বাধীনতাযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের নানা স্মৃতি তুলে ধরা হয় শহীদদের স্মরণে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ করার মাধ্যমে। তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই আমাদের ক্যাম্পাসেও নির্মিত হয়েছে এই স্বাধীনতা ভাস্কর্য।

প্রায় পাঁচ মাস সময় লেগেছিল স্বাধীনতা ভাস্কর্যটি নির্মাণ করতে। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই নির্মাণ শুরু হয়ে সেই বছরের বিজয় দিবসে সেটির উদ্বোধন করেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!