চুয়েট শিক্ষকের মদপান, তিন মাসেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ছাত্রদের হলে এক শিক্ষকের মদপানের ঘটনায় এখনও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন। অথচ তিন মাস আগে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে দুই সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে চুয়েটের ৪৯ তম ব্যাচের (শিক্ষাবর্ষ ২০১৮-১৯) শিক্ষা সমাপনী উৎসবের শেষ দিন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এলকায় বাস্কেটবল মাঠে কনসার্ট আয়োজন করা হয়। কনসার্ট চলাকালে ওই রাতে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক শাফকাত আর রুম্মান ভোররাত ৪টা নাগাদ শহীদ তারেক হুদা হলে মদপান করতে যান।

এর কিছু সময় পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের স্ত্রী ও চুয়েটের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং শিক্ষার্থীদের সামনে মদপান ও মাদকসেবন রত অবস্থায় রুম্মান উদয়কে দেখতে পান। এসময় তিনি উত্তেজিত উপস্থিত সকলকে বকাঝকা করেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি নিচে নেমে তারেক হুদা হল ও শহীদ মোহাম্মদ শাহ হলের মধ্যবর্তী স্থানে আহাজারি করতে থাকেন। এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা রুম্মান উদয়কে শিক্ষক ডরমিটরিতে পৌঁছে দেন।

বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে, শহীদ তারেক হুদা হলের প্রাধ্যক্ষ নিপু কুমার দাসের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জুন দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চুয়েটের গণিত বিভাগের অধ্যাপক সুনীল ধরকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান সুনীল ধর বলেন, প্রায় মাসখানেক ধরে চলা শিক্ষকদের কর্মবিরতি এবং ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে তদন্তে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তদন্তের কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। আগামীকাল রোববার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ব্যাপারে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলাকালীন কমিটির সদস্যরা কাজ করতে পারেননি। পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি। রোববার অফিসে গিয়ে আমি তদন্তের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেবো। আশা করছি খুব দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

এদিকে ঘটনার তিন মাসেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার তিন মাসেও অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া চুয়েট প্রশাসনের মাদকবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি এবং প্রশাসনের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যেই হোক, আমরা তার সঠিক বিচার চাই এবং মাদকমুক্ত চুয়েট ক্যাম্পাস চাই।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী মো. রায়হান উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী; ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু সেই শিক্ষকদের মধ্যেই একজন যখন ছাত্রদের সঙ্গে মদ্যপানের অভিযোগে অভিযুক্ত হোন, বিষয়টি আমাদের ছাত্রসমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। অতিদ্রুত অভিযুক্ত সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে চুয়েটকে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব, সুন্দর মানসিকতা চর্চার ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক শাফকাত আর রুম্মান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী এবং চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। শিক্ষার্থী থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে সহপাঠীকে মারধর, শহীদ মোহাম্মদ শাহ হল ক্যান্টিনের কর্মচারীকে মারধর, মাদক গ্রহণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে পুরকৌশল ও পরিবেশ অনুষদের ডিন সুদীপ কুমার পাল বলেন, তার বিষয়ে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকার ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না। এ ঘটনার পর আমাদের একটি সভায় হলের প্রাধ্যক্ষরা হলে মারপিটে তার জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানান। মারধরসহ বিভিন্ন ঘটনায় এর আগেও তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল, কিন্তু ঠিক কী কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেটা তখনকার উপাচার্য বলতে পারবেন। তবে বিষয়গুলো জানার পর আমরা এবারের গঠিত তদন্ত কমিটিকে অনুরোধ করেছি, যাতে উনারা স্বপ্রণোদিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে সবগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করেন। আমরা আশাবাদী তদন্ত কমিটি তথ্য উপাত্তসহ প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এমন ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া অযৌক্তিক কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে রেজাল্টকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারও পূর্বের কার্যকলাপকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এখানে আগে নিয়োগ দিয়ে পরে বিভিন্ন বিষয় যাচাই করা হয়। তবে এখন সময় এসেছে নিয়োগের ক্ষেত্রে একজনের অতীত কার্যকলাপকেও যাচাই-বাচাই করার। ফলে এরকম লজ্জাজনক পরিস্থিতির তৈরি হবে না।

জেডএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm