চীন থেকে চট্টগ্রামে আসা চালানে এবার মিলল ৮০ কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নজরদারিতে থাকা চীন থেকে আসা সেই চালানে ঠিকই মিললো সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প। চালানটি খালাস হয়ে গেলে অন্তত ৮০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাতো সরকার। কয়েক সপ্তাহ আগে বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকানাবিহীন প্রতিষ্ঠান এমন চালান এনে ধরা পড়লেও এবার চালানটি এনেছে চট্টগ্রামের জুবিলী রোডের আরাফাত এন্টারপ্রাইজ।

এর আগে গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) জাহাজের আইজিএম দাখিলে লক করা হয়েছিল চালানটি। ফলে কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর পরই বুধবার দুপুরে অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এতে এই চালানেও জাল স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। যার পরিমাণ ১ কোটি ৬২ লাখ পিস।

চীন থেকে চট্টগ্রামে আসা চালানে এবার মিলল ৮০ কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প 1

জানা গেছে, চীনের শেনজেন শহরের ডিজি এন্টি-ফেইক কোম্পানি লিমিটেড থেকে আমদানি করা চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসে আরাফাত এন্টারপ্রাইজ। অভিনব কায়দায় সাইজ প্রিন্টিং পেপারের ভেতর লুকিয়ে আনা হয় সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে জব্দ করা জাল সিগারেট স্ট্যাম্পের এ চালানেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েট লিমিটেড।

সূত্রমতে, চট্টগ্রামের জুবিলী রোডের কাদের টাওয়ারের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আরাফাত এন্টারপ্রাইজ এ-ফোর সাইজের কাগজ ঘোষণায় এক কনটেইনার পণ্য আমদানি করে। পণ্যচালানটি আমদানির লক্ষ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক জুবিলী রোড শাখা থেকে এলসি করা হয়।

বাংলাদেশে সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারের উপযোগী হালকা সবুজ ও হালকা খয়েরি রঙের জাল স্ট্যাম্প পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আইন অনুযায়ী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল ‘দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ হতে সংগ্রহ করতে হয়। ফলে এই জাতীয় পণ্য দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় করা অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করার কোন সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আইজিএম যাচাই করে পূর্বেই লক করেছি উক্ত চালান। আজ আমাদের ধারণা সত্য প্রমাণিত হলো। তবে এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুন না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে। আগামীকাল ফৌজদারী মামলা করা হবে।’

গত ১৪ ডিসেম্বর আর্ট পেপার আমদানির চালানে ১৪৩ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার ঘটনায় তোলপাড় চলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে। এর এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই কোম্পানি থেকে আমদানি করা আরাফাত এন্টারপ্রাইজের চালানেও একই ধরনের অবৈধ পণ্য পাওয়া গেল।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চীনের শেনজেন শহরের ‘ডিজি এন্টি-ফেইক কোম্পানি লিমিটেড’ এসব জাল স্ট্যাম্প তৈরি করছে। গত সপ্তাহে বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের আমদানি করা জাল স্ট্যাম্পের চালানটিও ছিল চীনের এই ডিজি এন্টি ফেইক কোম্পানির।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চীনের এই কোম্পানি থেকে চট্টগ্রামের দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ও আরাফাত এন্টারপ্রাইজ গত ২৪ মাসে ১৩টি চালান খালাস করে নিয়ে গেছে।

এদিকে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প আটকের ঘটনায় ভ্যাট গোয়েন্দা পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ও আরাফাত এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। জাল স্ট্যাম্প আমদানির সাম্প্রতিক ঘটনায় আলোচিত বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের পাশাপাশি চট্টগ্রামের জুবলী রোডের আরাফাত এন্টারপ্রাইজ গত কয়েক মাসে একই সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের সহায়তায় ছয়টি বিল-অব-এন্ট্রিতে ‘এ-৪ পেপার’ ঘোষণায় পণ্য খালাস গ্রহণ করেছে। কাস্টমস কমকর্তাদের সন্দেহ, ওই চালানগুলোতে সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প আমদানি করা হয়েছিল।

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!