চীন থেকে আসা এক সন্দেহজনক চালানের ওপর সতর্ক নজর চট্টগ্রামে
আরাফাত এন্টারপ্রাইজের চালান ‘লকড’ হয়ে গেল আগেই
প্রতারণায় জড়িত চীনের এক ‘সন্দেহভাজন’ কোম্পানির চালান এখনও ঢোকেনি চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু সেই চালান ঘিরে সতর্ক নজরদারি শুরু করে দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। তাদের ধারণা, চীন থেকে আসা ওই চালানে আসছে সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প। এমনই এক চালানে শত কোটি টাকা মূল্যমানের জাল স্ট্যাম্প ধরা পড়ার পর বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ নামে এক বেনামি কোম্পানিকে নিয়ে চলছে তোলপাড়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে পণ্যের একটি চালান আসছে চট্টগ্রামের জুবলী রোডের আরাফাত এন্টারপ্রাইজের নামে। চট্টগ্রাম বন্দরে সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প আটকের ঘটনায় সোমবার (২০ ডিসেম্বর) ভ্যাট গোয়েন্দা এই আরাফাত এন্টারপ্রাইজসহ দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। এমন পরিস্থিতিতে চীন থেকে আসা আরাফাত এন্টারপ্রাইজের চালানটির প্রতি বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
জানা গেছে, চীনের শেনজেন শহরের ‘ডিজি এন্টি-ফেইক কোম্পানি লিমিটেড’ থেকে আমদানি করা একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসছে আরাফাত এন্টারপ্রাইজ। চালানটি এখনও চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ঢোকেনি। তবুও আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের বিবেচনায় ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট বা আইজিএম দাখিলের সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) জাহাজের আইজিএম দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি আইজিএম থেকে জানতে পেরে চালানটির ডেলিভারি আগাম ‘লক’ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। কাস্টমস হাউসের বিশেষায়িত সফওয়্যার আ্যসাইকোডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ‘লক’ করা হয় চালানটি।
কাস্টমস কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, চীন থেকে আসা এই চালানেও সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প থাকতে পারে। যদিও চালানের কনটেইনার এখনো জাহাজ থেকে বন্দরের ইয়ার্ডে নামেইনি, শুধু বন্দরে নোঙর করেছে জাহাজটি। এ পণ্যচালানটিও খালাসের দায়িত্বে রয়েছে সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেড।
গত ১৪ ডিসেম্বর আর্ট পেপার আমদানির চালানে ১৪৩ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার ঘটনায় তোলপাড় চলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে। এর এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই কোম্পানি থেকে আমদানি করা আরাফাত এন্টারপ্রাইজের চালানেও একই ধরনের অবৈধ পণ্য থাকতে পারে বলে ধারণা কাস্টমসের কর্মকর্তাদের। আবার একই সিএন্ডএফ এজেন্সি পণ্যের ওই চালান খালাসের দায়িত্বে থাকায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের সন্দেহ আরও প্রবল হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চীনের শেনজেন শহরের ‘ডিজি এন্টি-ফেইক কোম্পানি লিমিটেড’ এসব জাল স্ট্যাম্প তৈরি করছে। গত সপ্তাহে বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের আমদানি করা জাল স্ট্যাম্পের চালানটিও ছিল চীনের এই ডিজি এন্টি ফেইক কোম্পানির।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চীনের এই কোম্পানি থেকে চট্টগ্রামের দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ও আরাফাত এন্টারপ্রাইজ গত ২৪ মাসে ১৩টি চালান খালাস করে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ একটি চালান ধরা পড়ার জালিয়াতির বড় একটি ঘটনা উন্মোচিত হয়। এ ঘটনার পর চীনা ওই কোম্পানি থেকে আমদানি করা যেকোনো পণ্যকে কড়া নজরে রেখেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আরাফাত এন্টাপ্রাইজের একটি চালান আমরা লক করেছি। যদিও ওই চালানের কনটেইনার এখনও জাহাজ থেকেই নামেনি। ইয়ার্ডে নামানো মাত্রই সেখানে অভিযান চালানো হবে। আমাদের সন্দেহ এ চালানেও অবৈধ বা জাল স্ট্যাম্প পাবো। যেহেতু চীনের একই কোম্পানি থেকে আমদানি, আবার খালাসের সিএন্ডএফও একই। সবকিছু মিলে আমাদের সন্দেহের তীর এখন আরাফাত এন্টারপ্রাইজের ওই চালানের দিকে।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, চীন থেকে আসা কনটেইনার জাহাজের আইজিএম দাখিলে দেখা যায়, সেটায় জাল ব্যান্ডরোল তৈরি করা কোম্পানিরই চালান রয়েছে। ফলে ওই চালানটি আইজিএমেই লক করা হয়েছে। যদিও পণ্য চালান খালাসের জন্য এখনও বিল অফ এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি। তবে আমদানিকারক বিল অফ এন্ট্রি দাখিল না করলেও কনটেইনার নামানোর সাথে সাথে কায়িক পরীক্ষা করা হবে। যেহেতু সন্দেহের তালিকায় রয়েছে চালানটি।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও জানিয়ে রাখা হয়েছে যাতে ওই জাহাজের কনটেইনারগুলোকে বিশেষ নজরে রাখে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে অভিযান চলবে ওই চালানে— এমন ইঙ্গিত মিলেছে কাস্টমস সূত্রে।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প আটকের ঘটনায় ভ্যাট গোয়েন্দা পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ও আরাফাত এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। জাল স্ট্যাম্প আমদানির সাম্প্রতিক ঘটনায় আলোচিত বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের পাশাপাশি চট্টগ্রামের জুবলী রোডের আরাফাত এন্টারপ্রাইজ গত কয়েক মাসে একই সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের সহায়তায় ছয়টি বিল-অব-এন্ট্রিতে ‘এ-৪ পেপার’ ঘোষণায় পণ্য খালাস গ্রহণ করেছে। কাস্টমস কমকর্তাদের সন্দেহ, ওই চালানগুলোতে সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প আমদানি করা হয়েছিল।
সিপি