চালের বাজার গরম, কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা

মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে বস্তায় ৫০০ টাকা। চালের দামে নাভিশ্বাস ওঠেছে সাধারণ ক্রেতাদের। একই সঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি ও ভোজ্যতেল।

জানা গেছে, গত দুদিনে চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে একশত টাকা । আর সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে দুইশত টাকা পর্যন্ত। দুই সপ্তাহ আগে বস্তাপ্রতি চাল ২ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। অথচ এই সময়ে চালের দাম কম থাকার কথা। উত্তর বঙ্গের মিল মালিকেরা অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

অন্যদিকে, মিলারদের দাবি ধানের দাম বাড়তি থাকায় বাড়ছে চালের দামও। চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর আজম বলেন, ‘সরকারের ধান-চাল কর্মসূচি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাজারে ধানের দাম বাড়তি ও ধান বেপারিরা ধান মজুত করায় বাজারে চালের দাম বাড়ছে’।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহসভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, উত্তর বঙ্গে বড় মিল মালিকেরা প্রতিযোগিতা করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বাড়ছে চালের দাম। ধানের দাম বাড়তি থাকায় এবার কৃষকও লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি এক হাজার থেকে বারোশত টাকায় ।

চট্টগ্রাম মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকার ও মিল মালিকেরা একসঙ্গে ধান-চাল কেনা শুরু করেছে । এতে বাজারের ওপর চাপ পড়েছে। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও বাড়তির দিকে রয়েছে।

এদিকে, ধানের দাম বাড়তি থাকায় সরকারের আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কর্মসূচি নিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে সরকারি গুদামে চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন মিল মালিকেরা। তারা চালের দাম বাড়ানোর দাবি করে আসছে সরকারের কাছে। সরকারি খাদ্য গুদামে মজুত বাড়াতে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ভারত থেকে এক লাখ টন চাল আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে।

চাল আমদানিকারণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী আকবর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সরকার সময় মতো চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় চালের দাম বেড়েছে। বর্তমানে চাল শুল্কমুক্তভাবে বেসরকারিভাবে আমদানির এলসি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরপরও কমছে না চালের বাজার বরং দিন দিন বাড়ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি দুই হাজার তিনশত টাকা। দুই সপ্তাহ আগে তা এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। আশুগঞ্জের আতপ এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। নূরজাহান সিদ্ধ (নতুন) ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫৮০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে। পুরো সিদ্ধ ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল মানভেদে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। মিনিকেট আতপ ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ টাকা দরে।

মিলার, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের চালের বাজার উত্তরবঙ্গ নির্ভর। নওগাঁ, দিনাজপুর, শান্তাহার, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, শেরপুর, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহ থেকে সরবরাহ করা চাল দিয়ে চট্টগ্রামের চাহিদা মিটানো হয়। আমন ধান ওঠার পর থেকেই বড় বড় মিল মালিকেরা ধান কিনে মজুত শুরু করছে। সরকারও ধান-চাল কেনা কর্মসূচিতে ধান চাল স্টক করেছে । অথচ উত্তরবঙ্গে বোরোর চেয়ে আমন উৎপাদন কম হয়েছে। এতে প্রতিযোগিতা করে ধান কিনছেন বড় চালকল মালিকেরা। ধানের বড় মজুত করে এখন বাজার নিয়ে ইচ্ছেমতো খেলছেন তারা।

সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কিনেছিল সরকার। সরকারি মজুত বাড়ানোর জন্য প্রতি বোরো ও আমন মৌসুমে এই কর্মসূচির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

এদিকে, সরকারি চালের মজুত এখন কমতির দিকে। গত বছর এ সময়ে সরকারের গুদামে ১১ লাখ টন চাল মজুত ছিল, বর্তমানে রয়েছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন, গম রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিকটন ।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!