চার্জ পরিশোধ করেই বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ভারত

প্রতিবেশী দেশ ভারত চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করতে হলে সকল চার্জ স্বাভাবিকভাবে পরিশোধ করতে হবে। তবে ভারতের ব্যবহারের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বন্দর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের প্রচুর ক্যাপাসিটি আছে। যদি ট্রান্সশিপমেন্টের জাহাজ আসে সেই জাহাজ হ্যান্ডেলিং করতে পারবো। প্রায়োরিটি বার্থিংয়ের বিষয়টি দুই সরকারের চুক্তির ধারার ওপর নির্ভর করবে। চট্টগ্রাম বন্দর জানুয়ারিতে দুটি ট্রায়াল করবে কলকাতা বন্দরের সঙ্গে, সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য। তবে নিয়মিত ট্রান্সশিপমেন্ট নির্ভর করবে ব্যবসায়ীরা কখন কার্গো দিতে পারছে তার ওপর। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ আদায় করবে চট্টগ্রাম বন্দর। কী পরিমাণ পণ্য আনা-নেওয়া হবে সেটি এখন বলা সম্ভব নয়।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বন্দরের দায়িত্ব হচ্ছে পণ্য নিয়ে জাহাজ এলে হ্যান্ডেলিং করা। ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য একটি নির্দিষ্ট ইয়ার্ডে বা টার্মিনালে থাকবে। এরপর ট্রাকে ওই কার্গো নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে নানা তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন বন্দর চেয়ারম্যান।

কনটেইনার হ্যান্ডেলিং রেকর্ড
২০১৯ সালে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সাধারণ কার্গো হ্যান্ডেলিং হয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ টন। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের এ সংখ্যা বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়িয়ে গেছে। এখন বন্দরের ইয়ার্ডে ৫০ হাজার কনটেইনার রাখা সম্ভব হচ্ছে।

নতুন টার্মিনাল বৃদ্ধি
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পিসিটিতে ৬০০ মিটার জেটিতে ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের ৩টি কনটেইনার জাহাজ ও ২২০ মিটার লম্বা তেলবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। ব্যাকআপ ইয়ার্ড থাকবে ১৬ একর, কনটেইনার ধারণক্ষমতা সাড়ে ৪ হাজার টিইইউ’স। পিসিটি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি সামাল দিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

বে টার্মিনাল প্রসঙ্গ
বে টার্মিনালের জন্য ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিকভাবে ইয়ার্ড, ট্রাক টার্মিনাল ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের বাকি ৮০৩ একর খাস জমি বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই জমি জেলা প্রশাসন থেকে সহসাই বন্দরকে হস্তান্তর করা হবে।

বে টার্মিনালে ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং ১২২৫ ও ৮৩০ মিটার দীর্ঘ ২টি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটি হলে বর্তমানে বন্দরের মূল জেটিতে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজ ভিড়ানোর যে সুযোগ, তার পরিবর্তে বেশি ড্রাফটের ও বড় জাহাজ দিন রাত ২৪ ঘণ্টা ভিড়ানোর সুযোগ থাকবে।

নতুন প্রকল্প
বন্দর সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি মিরসরাইয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরকে সাপোর্ট দিতে সীতাকুণ্ডে আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলমান আছে। পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বন্দরের জলসীমা ৬গুণ বেড়েছে। এছাড়াও নতুন করে ৩৭ একর জায়গা ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড যুক্ত করা হচ্ছে। মোট ১৫টি জেটি নির্মাণ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজ হ্যান্ডেলিং ও সময়
২০১৯ সালে ৩৮০৭টি জাহাজ হ্যান্ডেলিং হয়েছে। ২০১৮ সালে হয়েছিল ৩৭৪৭টি। জাহাজ অপেক্ষার সময় ডুয়েল টাইম কমে এসেছে। আগে একটি জাহাজকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো। এখন জাহাজ অপেক্ষা করতে হচ্ছে এক থেকে দুই দিন। বহির্নোঙ্গরে আসা জাহাজ এক দিনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সরাসরি জেটিতে ভিড়ানো হচ্ছে।

মুজিববর্ষ পালনের প্রস্তুতি
মুজিববর্ষে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পুরোদেমে চালু করেন। যুদ্ধের সময় কর্ণফুলীতে পুতে রাখা মাইন অপসারণ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ টেরিটোরিয়াল ওয়াটার অ্যাক্টস প্রণয়ন করেন। ফলে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে টুর্নামেন্ট।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. জাফর আলম, কমডোর শফিউল বারী, ক্যাপ্টেন মহিদুল হাসান, পরিচালক (প্রশাসন) মমিনুর রশীদ, সচিব মো. ওমর ফারুক, পরিচালক (পরিবহন) মো. এনামুল করিম প্রমুখ।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!