চামড়ার বাজার/ আগে চলতো গোলাগুলি, এখন চোখের জলে বাড়ি ফেরা

মন্তব্য প্রতিবেদন

হায়রে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার! একসময় এর দখল নিতে চলতো গোলাগুলি, আর এখন চোখের জলে বাড়ি ফেরা। কী যে নিয়তি—সম্পদকে কাটা মনে করেন যারা, উন্নয়নের রোডম্যাপ যারা করেন—তাদের নজর কিভাবে এড়ায়? দেশের এ অমূল্য সম্পদ বিনামূল্যে পাওয়ার সুযোগ নষ্ট করে মাটিতে পুঁতে ফেলাই সমাধান!

আগে দেখতাম পাড়ায় কোরবানির পশুর চামড়া নিতে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে কী অসম প্রতিযোগিতা। মুহূর্তে দাম উঠত। তাই দামও ভাল পাওয়া যেত। যে চামড়া এখন বিনামূল্যেও অচল তা সে সময় সেটা ৩-৪ হাজারেও ঠেকতো। আর সন্ধ্যার অন্ধকারে চামড়া বাজারের দখল নিতে গোলাগুলি পর্যন্ত হতো। হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে। আগে চামড়া দিয়ে যা তৈরি হতো এখন তা কি হয় না? চামড়ার তৈরি জিনিসপত্র স্বাস্থ্যবান্ধব। বরং এর ব্যবহার ও চহিদা বেড়েছে। কিন্তু আমরা কোন পথে হাটছি? চামড়ার বাজার আর চামড়া নিয়ে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের এমন তেলেসমাতি কোন ইংগিত বহন করে?

এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। পাড়ায় আগের দৃশ্য নেই। চামড়া কিনতে নেই তোড়জোড়, নেই প্রতিযোগিতাও। আর গোলাগুলিও নেই। এবার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গী হয়েছে চোখের জল। লাভ দূরে থাক, পুরো পুঁজিই ভেসে গেছে চোখের জলের সাথে। দাম বেধে দিয়েছিল সরকার। তার চেয়েও অনেক কম দামে কেনা, আবার ক্রেতা না পেয়ে বিনামূল্যেও মৌসুমি ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন অনেকে। এরপরও মুক্তি নেই।

আড়তদার প্রথম দিকে চামড়াপ্রতি ৫০ টাকা দর দেয়, সন্ধ্যার পর তো আর ক্রেতাই ছিল না। বিনামূল্যে নেওয়ার লোকও মেলেনি। কারণ সংরক্ষণের জন্য লবণের দাম এক লাফে কয়েকগুণ বেশি, তাই সেই উপায়ও ছিল না।

চট্টগ্রাম নগরীর চৌমুহনীর আশেপাশে রাস্তার দুপাশে চামড়ার স্তূপ। ক্রেতা নেই। খোঁজ মিলছিল না চামড়ার মালিকেরই। একপর্যায়ে সব ফেলে বিক্রেতা উধাও। কারণ পচনশীল চামড়া গলার ফাঁস হওয়ার উপক্রম। এমন অবস্থায় মৌসুমী চামড়া ফেলে বাড়ি ফিরে যাওয়া যেন ছেড়ে যাওয়াই নিরাপদ যেন। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!

প্রায় তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে এমন অভিজ্ঞতায় মনটা ভারী বিষণ্ন হল। বারবার ভেসে আসছে মালিকবিহীন চামড়ার স্তূপের পর স্তূপের দৃশ্য। এমন দৃশ্য নগরীর বিবিরহাট, সল্টগোলাসহ অনেক স্থানের। লক্ষাধিক চামড়া ছিল বেওয়ারিশ অবস্থায়। শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এগিয়ে আসল।

ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে রোগ জীবাণু থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে আবর্জনা স্তুপে ফেলে দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার চামড়া। অনেক স্থানে এ কাজটিও হয়েছে বিলম্বে। ফলে দুর্গন্ধে রাস্তায় আসা যায়নি। মূল্যবান সম্পদের উৎস নিজেদের, আমদানি করতে হলে মনে হয় এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেত।

হায়রে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই। উন্নয়নের রোড ম্যাপ যারা করেন, যার সরকারকে পরিকল্পনা প্রদান করেন—তাদের ভাবনাটা বাস্তবিক ও দেশের স্বার্থে করা উচিত নয় কি? নিজের উৎস কাঁচামালের গুরুত্ব বাড়ানোর বিষয়টি ভাবনায় আনতে হবে। তবেই দেশের সব মানুষের সমৃদ্ধি হবে।

প্রবাদ আছে, ডাক্তার আসিবার আগেই রোগী মারা গেল—তা মাথায় রাখা উচিত নীতিনির্ধারকদের। নয়তো একদিন জনরোষ জবাব দেবে ষড়যন্ত্রকারীদের।

মহসীন চৌধুরী : সাংবাদিক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!