চাঁদা তুলেই নিঃস্ব থেকে কোটিপতি, কখনও জেএসএস কখনও ইউপিডিএফ

চেহারা সাদামাটা। কিন্তু ভেতরে ভয়ংকর চাঁদাবাজ। অপকর্ম ঢাকতে বাইরে তিনি ‘কাঠ ব্যবসায়ী’। চাঁদাবাজিই তার আয়ের মূল উৎস। পাহাড়ের দুই আঞ্চলিক দল সন্তুলারমার জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও প্রসিতখীসার ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) তার ভাগ্যের চাকা খুলে দিয়েছে। এ দুই সংগঠনের নামে চাঁদা আদায় করে এককালের সহায় সম্বলহীন শংকদীশ কুমার বড়ুয়া (৪৬) মাত্র কয়েক বছরে এখন হয়েছেন জমি, গাড়ি, বাড়িসহ অন্তত ১৫ কোটি টাকার মালিক। এরমধ্যে নগদই আছে ৩ কোটি টাকা।

তবে সেনাবাহিনী ও র‌্যাব-৭ এর জালে ধরা পড়ে এখন তার নতুন ঠিকানা হয়েছে জেল হাজত। জানিয়েছেন চাঁদাবাজি চক্রের অন্য সদস্যদের নামও।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) ভোরে রাঙামাটির কুতুকছড়ি বাজার এলাকায় সেনাবাহিনী ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে শংকদীশ কুমার বড়ুয়াকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি রিভলবার ও তিন রাউন্ড গুলি, নগদ টাকা, জেএসএস ও ইউপিডিএফের চাঁদা আদায়ের রসিদ বই উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (২ মার্চ) বিকেলে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাতা তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ৫ জনকে হত্যাকাণ্ডের এজাহারভূক্ত আসামি দিগন্ত চাকমাকে নানিয়াচর উপজেলার ১৯ মাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে সেনাবাহিনী। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

রাঙামাটি সেনা জোনের মেজর মহিউদ্দিন মঙ্গলবার দুপুরে জানান, দিগন্ত চাকমা প্রসিতখীসার ইউপিডিএফের সামরিক শাখার সদস্য। সে দীর্ঘদিন যাবৎ নানিয়ারচর উপজেলার ১৭ মাইল, ১৮ মাইল, বেতছড়ি ও কেংগালছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফের হয়ে হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত।

এছাড়া দিগন্ত চাকমা নানিয়ারচরের বেতছড়িতে ২০১৮ সালে ৪ মে সংঘঠিত ব্রাশফায়ারে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ’র প্রতিষ্ঠাতা তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ৫ জনকে হত্যাকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ওই হত্যামামলায় সে এজাহারভুক্ত আসামি। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি দিশানপাড়া এলাকায় ভূমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার পরিকল্পনার পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

শংকদীশ কুমার বড়ুয়ার আটকের অভিযানে অংশ নেন চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর মেজর মো. শামীম সরকার, মেজর মুশফিকুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আজিজ।

মেজর শামীম সরকার বলেন, ‘শংকদীশ কাঠ ব্যবসার আড়ালে জেএসএস ও ইউপিডিএফ’র চাঁদা কালেকশন করতেন। এছাড়া ওই দুই সংগঠনের রেশন, পোশাক, অস্ত্র গোলাবারুদসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন তিনি। শংকদীপ স্বীকার করেছে ব্যবসায়ীদের জনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করতো। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রাঙামাটির কোতোয়ালী থানায় চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!