চাঁদার ভাগ চেয়ে মুরাদপুরে ছাত্রলীগ নেতার প্রকাশ্য কোপাকুপি (ভিডিও ১৮+)

ফুটপাতের চাঁদা নিয়ে গ্রুপ-উপগ্রুপের সংঘাত

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর মির্জাপুল এলাকায় বিকাল হলেই বসে ভাসমান বাজার। ভ্যানগাড়িতে করে হকাররা কয়েক ঘন্টার জন্য বেচাকেনার জায়গা হিসেবে বেছে নেয় এই মির্জাপুল এলাকাটিকে। তবে বিনামূল্যে নয়, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা তুলে দিয়েই হকারদের বসতে হয়। সেই চাঁদার টাকায় ভাগ বসানো নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে। তেমনই এক ঘটনায় এক গ্রুপের প্রধান লোকজন প্রকাশ্যে দিনেদুপুরে কোপালো অন্য গ্রুপের কাণ্ডারীকে।

মির্জাপুল এলাকার হকার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আরিফ। কিন্তু চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সদস্যপদ পাওয়ার পর থেকেই আরিফের চাঁদার ব্যবসার ওপর নজর পড়ে ওয়াহিদের। এরপর থেকেই চাঁদার ভাগ নিয়ে দফায় দফায় ছোট বড় সংঘাতে জড়িয়েছে ওয়াহিদ ও আরিফ গ্রুপ।

চাঁদার এই টাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সবশেষ বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিকাল ৪ টায় দিনদুপুরে প্রকাশ্য সড়কে আরিফ গ্রুপ প্রধান আরিফকে চাপাতি দিয়ে কোপান মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য ওয়াহিদ আলম ওয়াহিদ। এই ঘটনার তিনদিন আগেও এই দুজনের মধ্যে চাঁদার টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি হয়।

আরিফকে কোপানোর সেই ঘটনার একটি ভিডিও হাতে এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াহিদের মার খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন আরিফ। এরপর একটি চাপাতি দিয়ে আরিফকে বেশ কয়েকটি কোপ দেন ওয়াহিদ। তাতেও রাগ না কমায় একটি বড় পাথর তুলে সেটা ক্ষতবিক্ষত আরিফের মাথায় মারতে দেখা যায় ওয়াহিদকে।

ভিডিওতে ক্ষুদ্ধ ওয়াহিদকে অক্ষতভাবে দেখা গেলেও তিনি পরবর্তীতে এই ভয়ংকর ঘটনাটি থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য একই চাপাতি দিয়ে নিজেকে নিজে ক্ষতবিক্ষত করেন— এমনটিই দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী।

ফুটপাতের চাঁদা নিয়ে গ্রুপ-উপগ্রুপ

নগরীর মির্জাপুল এলাকার বাজারে বেশ কয়েক বছর ধরে এককভাবে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আরিফ। কিন্তু কিছুদিন আগে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে সদস্য হিসেবে ঢোকার পর থেকে আরিফের একক রাজত্বে ভাগ বসাতে থাকেন ওয়াহিদ। মির্জাপুলের হকারদের থেকে চাঁদাবাজি ও জুটের ব্যবসার ভাগ নিতে নিজেই গড়ে তুলেন একটি উপ-গ্রুপ। সেই দলে যুক্ত করেন খুকু, ইমরান, নয়ন, আকাশসহ আরও ৩০-৪০ জন কর্মীকে। এমইএস কলেজের ছাত্র ওয়াহিদ এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজার থেকে আরিফের তোলা চাঁদার একটি অংশ তাকে দিয়ে দেওয়ার দাবি জানান ওয়াহিদ। কিন্তু ওয়াহিদের এমন দাবিকে পাত্তাই দিচ্ছিলেন না আরিফ। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে এর আগেও একাধিকবার ঝগড়া হয়। সর্বশেষ বুধবার (১৭ নভেম্বর) সেই বিবাদ রক্তক্ষয়ী কোপাকুপিতে রূপ নেয়।

ওইদিন রক্তে ভেজা আরিফকে মুমুর্ষূ অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তার অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে আরিফের পরিবার।

এই ঘটনার পর বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াহিদকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইলশ থানায় মামলা করেছে আরিফের পরিবার।

ঘটনার পরদিন মূল হোতা ওয়াহিদকে তার দুই সহযোগী নয়ন ও আকাশসহ আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টায় মামলা হয়েছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ওসি বলেন, আরিফকে হত্যার চেষ্টা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে আমরা তিনজনকে আটক করেছি। এই ঘটনার পিছনের কারণ জানতে আমরা আদালতে রিমান্ডের আবেদন করবো।

ভিডিও যাচাই করছে নগর ছাত্রলীগ

অভিযুক্ত ওয়াহিদ নিজেকে নগর ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দাবি করেন। তবে ছাত্রলীগের নিয়ম অনুসারে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি কর্তন বা বর্ধন একমাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগই করতে পারবে। নিজেদের কমিটির সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর কোনো এখতিয়ার নগর ছাত্রলীগের হাতে নেই বলে জানান সাবেক এক ছাত্রনেতা। শুধুমাত্র কিছু টাকার লোভে অছাত্র-খুনি ও চাঁদাবাজদের হাতে ছাত্রলীগের পদ তুলে দিয়ে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটিকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে— আক্ষেপের সুরে বললেন সেই ছাত্রনেতা।

তবে মহানগর কমিটিতে ওয়াহিদের সদস্যপদ ‘সম্পূর্ণ বৈধ’ দাবি করে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘ওয়াহিদকে নিয়ম মেনেই সদস্য করা হয়েছে।’

নগর ছাত্রলীগের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর ক্ষমতা আপনাদের হাতে আছে কিনা জানতে চাইলে দস্তগীর উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে আপনিই বলুন কিভাবে সদস্য করা যায়?’

অভিযুক্ত ওয়াহিদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা— এমন প্রশ্নে জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘একটি ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি, সেটা ওয়াহিদ কিনা তা আমরা যাচাইবাছাই করে দেখছি। যদি সে অপরাধী হয় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সাংবাদিকদের কাছে প্রেস রিলিজ পৌঁছে দেওয়া হবে। আর ঘটনাটি যাচাইয়ের জন্য নগর ছাত্রলীগের এক সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!