ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানসহ মোট ২০৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামভিত্তিক চার সাংবাদিকও।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় হৃদয় তরুয়ার বন্ধু আজিজুল হক বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলাটিতে এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। তার আগে ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। হৃদয় চবির ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার। দুই ভাইবোনের মধ্যে হৃদয় ছিলেন ছোট। তার বড় বোন মিতু রানীর বিয়ে হয়েছে। হৃদয়ের বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রি। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন হৃদয়।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আরও যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন।
আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন, এফবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়াল, খাগড়াছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি নূরে আলম মিনা, সিএমপির সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ মহসিন, পাঁচলাইশ থানার সাবেক ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া, খাগড়াছড়ির সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মং শৈ প্রু।
এছাড়া চট্টগ্রামভিত্তিক চার সাংবাদিককেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন— চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আজাদীর রিপোর্টার শুকলাল দাশ, সময় টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কমল দে ও একুশে টিভির সাবেক আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া অংশ নেন। একইদিন চান্দগাঁও এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে আহত হয়েছিলেন হৃদয়। গত ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসামিদের অনেকে হামলায় যোগ দেন।