চবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, সোহাগ পরিবহনের তিনজন আটক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাস চালকসহ তিনজনকে আটক করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পর নগরীর চান্দগাঁও থানার বাসটার্মিনাল ও বাহির সিগন্যাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটকরা হলেন ঢাকা মেট্রো ব-১৫৬০৭৭ নম্বরের সোহাগ পরিবহনটির চালক এহসান করিম (২৭), সুপারভাইজার আলী আব্বাস (৩৫) ও হেলপার ভূট্টো।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফেসবুকে দেওয়া চবি ছাত্রীর যৌন হয়রানির বর্ণনার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে আমরা অভিযানে নামি। শনিবার সন্ধ্যার দিকে চান্দগাঁও এলাকা থেকে বাসচালক হেলপার ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রোববার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় সিএমপির সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত বাসের সুপার ভাইজারের লালসার শিকার হতে যাচ্ছিলেন চবির ছাত্রীটি। এ কাজে সহযোগিতা করছিল হেলপারও। তবে চালকের সম্মতি থাকলেও ছাত্রীটির সাহসী ভূমিকা ও চিৎকার চেঁচামেচির কারণে ভয় থেকেই তাকে চান্দগাঁও থানার সামনে খালি জায়গায় নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যায় বাসটি।

এর আগে ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নগরীর ২নং গেইট এলাকায় আসার পথে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে ওই শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হন। বুধবারের (২৭ নভেম্বর) ওই ঘটনার পুরো বিষয়টি বর্ণনা করে ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

বুধবারের (২৭ নভেম্বর) ওই ঘটনার পুরো বিষয়টি বর্ণনা করে ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

‘হ্যাঁ আর ৫ টা মেয়ের মতো আজ আমিও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি।!

পটিয়া গিয়েছিলাম বোনের বাসায় বেড়াতে….. সাধারণত ট্রেনেই আসা যাওয়া করি আমি; বাসে ভমিটিং এর প্রব্লেম থাকার কারণে উঠাও কম হয়। দুলাভাই এর বাসা মুন্সেফবাজার, গলি থেকে বের হলেই নাকি বাস পাওয়া যায় উনি বলেছিলন, নতুন ব্রিজ,, কিংবা টার্মিনাল এর বাস। বাসা থেকে নেমে রিকশা নিয়ে মেইন রাস্তা অব্দি আসলাম। নেমে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই একটা “সোহাগ” এর বড় বাস আসছিলো, হাত নাড়ালাম। থামলো,বাস এ অতটা ভীড় ছিলোনা বললেই চলে, তবে খালিও কিন্তু ছিলো না। আমি কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করলাম বহদ্দারহাট যাবে কিনা! উনি বললো যাবে, উঠলাম। জানালার পাশের সিট খুঁজছিলাম, মানুষ কম থাকলেও সবাই মোটামোটি জানালার পাশেই বসে ছিলো। অতঃপর সিট না পেয়ে একটি আন্টির পাশে গিয়েই বসলাম আমি। প্রথম থেকে ৩ নং চেয়ারে। বাস চলছে। কন্ডাক্টর ছিলেন দুইজন। একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলো আরেকজন টাকা তুলছিলো। কিছুক্ষণ পর একজন আসে, বলে ভাড়া দেন। আমি
জিজ্ঞেস করলাম কত? আবারো জিজ্ঞেস করে কই যাবেন?

আমি বললাম: মামা আমি ২নং গেইট যাবো, কোথায় নামলে সুবিধে হয়, উনি বললেন টার্মিনাল। আমি বললাম তাহলে টার্মিনাল এর ভাড়াই নেন। উনি ৬০ টাকা নিলো, আর জিজ্ঞেস করলো একা কিনা, আমি বললাম জ্বি ভেবেছিলাম হয়তো ভাড়ার জন্য, বা ভাড়া নেয়ার জন্য জিজ্ঞেস করেছে।এরপর থেকে উনি বারবার তাকাই ছিলো আমার দিকে, আমি অত পাত্তা না দিয়েই আবারো কানে হেডফোন গুঁজে বসে ছিলাম। আমার পাশের আন্টি নতুন ব্রিজ নেমে যায়, আমি জানালার পাশে গিয়ে বসি। এরপর বহদ্দারহাট কিনা জানি না, একটা জায়গায় এসে বাস দাঁড়ায় এবং অনেকজন নেমে যায়, আমি উঠে নেমে যাচ্ছিলাম কন্ডাক্টর বলে আপনি না ২নং যাবেন? আপনাকে ওখানেই নামাই দিবো বসেন, আমি দরজার পাশে প্রথম সিটে আবারো
বসলাম। বাস ড্রাইভার মিরর দিয়ে বারবার তাকাচ্ছিলো আমার দিকে, আমার সন্দেহ হতে থাকে, আমি পিছে তাকাই দেখি একটা মানুষ ও নাই।

আমি বললাম ভাই আমাকে নামাই দেন আমি ২নং গেইট যাবো না। যিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন উনি দরজা টা খুব তাড়াতাড়ি আটকে দেয়। আমি চিল্লাই উঠে বললাম ড্রাইভার বাস থামান আমি নামবো, উনি এমন ভান করছিলো যেন উনি আমাকে শুনতেই পাচ্ছেনা।

আমি ৯৯৯ টাইপ করছিলাম— এ সময় কন্ডাক্টর এসে আমার ব্যাগ নিয়ে নেয়, আমি ব্যাগ আটকানোর জন্য উনার সাথে টানাটানি করছিলাম আর সারাক্ষণ চিৎকার করছিলাম জানালা দিয়ে। কন্ডাক্টর আমাকে ধাক্কা দেয় আমি দরজার সাথে খুব জোরে বাড়ি খাই। আমি পা দিয়ে দরজায় লাথি মারছিলাম, আর চিৎকার করছিলাম। আমার হিজাব টানছিলো দুইজন কন্ডাক্টরের একজন। আমি কান্না করে করে লাথি মারছিলাম দরজায় আর নিজেকে বাচাঁনোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম রাস্তার কিছু মানুষ ব্যাপার টি হয়তো নোটিস করেছিলো, আমি জানি না। ড্রাইভার বলে ছেড়ে দে, সুবিধা নাই। বাস থামায় আমি জিনিস নিয়ে নেমে পুলিশ বক্স খুঁজছিলাম ইভেন আমি চিনিও না জায়গাটা। বাস এর নাম্বার দেখতে পারি নি সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছিলো। একটা রিকশা নিলাম আর বাসায় আসলাম।
আল-হামদুলিল্লাহ এখন আমি সুস্থ এবং আমার ক্ষতি করতে পারেনি। জানি না হয়তো সুবিধে পায়নি বলে এই যাত্রায় আমি বিথী বেঁচে গেছি কিন্তু অন্যদিন সুবিধে পেলে হয়তো অন্য একটি বোনের বা মায়ের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যাবে। এদেশে মেয়েদের অনেক সম্মান! অনেক বেশিই!!!!
#আলহামদুলিল্লাহ_আমি_সুস্থ_আছি_ ।’

প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল বিকেলে ক্লাস শেষে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন অর্থনীতি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী। আত্মরক্ষার্থে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে হেলপারটিকে আঘাত করে চলন্ত বাস থেকেই লাফ দেয়। পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে নগরীর কোতায়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!