চবির সাত স্থাপনা পেল নতুন নাম, একটি হল স্বাধীনতাবিরোধীর নামে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলসহ মোট সাতটি স্থাপনার নাম বদলে ফেলা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার বাবা-মা ও ভাইয়ের নামে স্থাপিত সব স্থাপনার নাম বদলে গেছে। নতুন নির্মিতব্য আবাসিক হলের নাম রাখা হয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সরাসরি স্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং তার বিরুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাসভবন ‘গুডস হিলে’ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামে ফজলুল কাদের চৌধুরীর বাসভবন ‘গুডস হিলে’ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ৫৫৯তম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সট্রাঅর্ডিনারি সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছাত্রদের নবনির্মিত আবাসিক হল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে’র নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘শহিদ মো. ফরহাদ হোসেন হল।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী গত বছরের ৪ আগস্ট মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে’র নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিজয় চব্বিশ’ হল। অন্যদিকে ছাত্রীদের আবাসিক হল ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে’র নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী’ হল। ফয়জুন্নেসা ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও একমাত্র মহিলা নওয়াব ও নারীশিক্ষার পথিকৃৎ।

পুরোনো শামসুন নাহার হলের জায়গায় ছাত্রদের জন্য নতুন যে আবাসিক হল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই হলের নাম ঠিক করা হয়েছে ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী’ হল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলাদেশের সরাসরি বিপক্ষে এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রায় দেড় মণ সোনা নিয়ে নৌযানে করে দেশ থেকে পালানোর সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রামে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠনে তিনি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেন। পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় ১৯৭৩ সালে ১৮ জুলাই হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবন ‘আবু ইউসুফ ভবনে’র নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবন’। আবু ইউসুফ বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য ছিলেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া গত বছরের ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার পাঁচদিন পর হাসপাতালে মারা যান।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যানে’র নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই বিপ্লব উদ্যান’। অন্যদিকে ‘শেখ কামাল জিমনেসিয়ামে’র নতুন নাম ঠিক করা হয়েছে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম’।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm