চবির ভর্তিযুদ্ধের এ-টু-জেড, ক্যাম্পাস ঢেকেছে নিরাপত্তার চাদরে

গোটা ক্যাম্পাস গোয়েন্দা নজরদারিতে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে বুধবার (২৭ অক্টোবর)। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেকে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সদস্য সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গোটা ক্যাম্পাসকে আনা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায়। সন্দেহভাজন ছাড়াও ছাত্রলীগসহ বিবাদমান বিভিন্ন সংগঠনগুলোর ওপর রাখা হচ্ছে বিশেষ নজরদারি। সংঘর্ষ কিংবা র‍্যাগিংসহ অপ্রীতিকর যে কোনো পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্যবিধির বিষয় মাথায় রেখে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এবার প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষা কয়েকটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি শিফটে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এসএম মনিরুল হাসান।

তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি শেষ। এবারের পরিস্থিতি অন্যান্যবারের মতো নয়। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এবার তিনটি ইউনিটের পরীক্ষা কয়েকটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে আমাদের পাশাপাশি ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

ইউনিটপ্রতি প্রতিযোগীর সংখ্যা

আইসিটি সেল সূত্রে জানা যায়, ‘এ’ ইউনিটে ১ হাজার ২১২টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৬৮ হাজার ১০৬ জন শিক্ষার্থী। এতে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬ জন। এই ইউনিটের পরীক্ষা দুইদিনে চার শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন দুই শিফটে ১৭ হাজার ২৮ জন করে এবং দ্বিতীয় দিন প্রথম শিফটে ১৭ হাজার ২৮ জন ও দ্বিতীয় শিফটে ১৭ হাজার ২৬ জন অংশ নেবে।

‘বি’ ইউনিটে ১ হাজার ২২১টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৪২ হাজার ৬৬৮ জন শিক্ষার্থী। প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য লড়বে ৩৫ জন। এই ইউনিটের পরীক্ষা দুইদিনে তিন শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রথম দিন দুই শিফটে ১৪ হাজার ২২৩ জন করে ভর্তিচ্ছু অংশ নেবে। দ্বিতীয় দিন এক শিফটে অংশ নেবে ১৪ হাজার ২২১ জন।

‘সি’ ইউনিটে ৪৪১টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ১৩ হাজার ৯১৮ জন শিক্ষার্থী। প্রতি আসনে ভর্তির জন্য এই ইউনিটে লড়বে ৩২ জন। এই ইউনিটের পরীক্ষা এক শিফটে অনুষ্ঠিত হবে।

‘ডি’ ইউনিটে ১ হাজার ১৬০টি আসনের বিপরীতে ৫৪ হাজার ২৪৯ জন আবেদন করেছেন। সম্মিলিত এই ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ৪৭ জন লড়বে। এই ইউনিটের পরীক্ষাও চার শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি শিফটে ১৩ হাজার ৫৬১জন করে অংশ নেবে।

দুইটি উপ-ইউনিটের মধ্যে ‘বি১’ ইউনিটে ১২৫টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ২ হাজার ২০ জন। এই উপ-ইউনিটে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তির জন্য লড়বে ১৬ জন। আর ‘ডি১’ উপ ইউনিটে ৩০টি আসনের বিপরীতে ২ হাজার ৯০২ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এই উপ ইউনিটে আসন প্রতি লড়বে ৯৭ জন।

আসন বিন্যাস ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে৷ পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ আইডিতে লগইন করে আসনবিন্যাস দেখতে পারবে।

পরীক্ষা পদ্ধতি

ভর্তি পরীক্ষা বরাবরের মতোই ১২০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০ নম্বর লিখিত পরীক্ষা (বহুনির্বাচনি) ও বাকি ২০ নম্বর এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ থেকে যুক্ত হবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ বিষয়সহ মাধ্যমিকের জিপিএ ৪০ শতাংশ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ’র ৬০ শতাংশ যোগ হবে। বহুনির্বাচনী পদ্ধতির এই ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর হবে ৪০।

ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি

আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা। ২৯ অক্টোবর ‘সি’ ইউনিট, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ‘ডি’ ইউনিট এবং ১ ও ২ নভেম্বর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৫ নভেম্বর উপ-ইউনিট ‘বি-১’ ও ‘ডি-১’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষা সকাল-বিকাল শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। সকালের শিফটের পরীক্ষার্থীরা পৌনে ১০টায় কেন্দ্রে প্রবেশ করবে। ওএমআর ফরম বিতরণ করা হবে সোয়া ১০ টায়। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে বেলা ১১ টায়। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১২ টায়।

অন্যদিকে দুপুরের শিফটের পরীক্ষার্থীরা সোয়া দুইটায় কেন্দ্রে প্রবেশ করবে। ওএমআর ফরম বিতরণ করা হবে পৌনে তিনটায়। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে দুপুর সাড়ে তিনটায়। পরীক্ষা শেষ হবে বিকেল সাড়ে চারটায়।

শাটল ট্রেনের সময়সূচি

ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই বিশেষ শাটল সার্ভিস চলবে।

নগরীর বটতলী রেলস্টেশন থেকে যথাক্রমে সকাল ৬টায়, সাড়ে ৬টায়, সাড়ে সাতটা, ৮ টা ১৫ মিনিটে , ৮টা ৪৫ মিনিটে, ১১টা ৪০ মিনিটে, দুপুর ১২ টায়, সাড়ে ১২টায়, বিকেল ৩টায়, ৪টায় ও রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে যথাক্রমে সকাল ৭টা ০৫ মিনিটে, সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে, সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে, সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে, সকাল ১০টায়, দুপুর ১টায়, দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, বিকেল ৩টায়, বিকেল ৫টায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটা ও রাত ৯টা ১০ মিনিটে নগরীর বটতলীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

সব ট্রেনই ঝাউতলা, ষোলশহর, ক্যান্টনমেন্ট, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদ স্টেশনে কিছুক্ষণ থেমে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে যাবে। প্রতিটি ট্রেন বটতলী রেল স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে আসতে আনুমানিক ১ ঘন্টা সময় লাগবে।

এছাড়া শহর থেকে নগরীর নিউমার্কেট, মুরাদপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে তিন নম্বর বাস সার্ভিস রয়েছে। এদিকে পরীক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে দুই নং গেইট দিয়ে বের হয় যাবে। তবে কেউ যদি ক্যাম্পাসে গাড়ি রাখতে চায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে পার্কিং করতে পারবে।

পরীক্ষার্থীদের প্রতি ৮ নির্দেশনা

এ দিকে ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনাগুলো হল—

পরীক্ষার হলে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান করতে হবে। পরীক্ষার্থীদের সাথে একের অধিক অভিভাবক আসতে পারবে না ও নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা নিজস্ব পরিচয়পত্র সাথে রাখতে হবে। পরীক্ষা শেষে ধাপে ধাপে কেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে। দুই কপি প্রবেশপত্র, পাসপাের্ট সাইজের দুই কপি ছবি ও উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার মূল রেজিষ্টেশন কার্ড অথবা A লেভেলের Statement of Entry এর মূলকপি ভর্তি পরীক্ষার দিন অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। পরীক্ষার হলে fx-100 বা এর নিচে সাধারণ মানের (মেমরী ‘অপশন/সীম ব্যতিত) ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে।

এছাড়া পরীক্ষার হলে প্রার্থীর মােবাইল ফোন, মেমোরি যুক্ত ক্যালকুলেটর/সীম, ডিভাইস সম্বলিত ঘড়ি ও কলমসহ যেকোন সঙ্গে রাখতে পারবে না। প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে কারাে কাছে কোন অভিযােগ দৃষ্টিগােচর হলে তা ১ম ও ২য় শিফটে নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ সময়ের ন্যূনতম এক ঘন্টা পূর্বে সকল প্রমাণাদিসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিট কো-অর্ডিনেটরের কাছে লিখিত অভিযােগ করা এবং ভর্তি পরীক্ষায় কারাে বিরুদ্ধে কোন ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন পরিবেশে সুসম্পন্ন করতে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তায় পাঁচ শতাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রক্টরিয়াল বডি সতর্ক অবস্থানে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসার রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ১১ জোড়া শাটল ট্রেন চলবে।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!