চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) দুই শিক্ষককে কিছু ‘বিপথগামী ছাত্র’ হুমকি, অসম্মান, অবমাননা করছে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সোমবার (৪ অক্টোবর) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। একই বিবৃতি উপাচার্য বরাবর পাঠিয়ে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, কতিপয় বিপথগামী ছাত্র নামধারীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারপূর্ণ শ্লোগান, আপত্তিকর শব্দপ্রয়োগে গালাগাল ও হুমকি দিয়ে অসম্মান-অবমাননা করে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যাচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে চবি ক্যাম্পাসে দুজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অশ্লীল শ্লোগান ও শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দিয়ে মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। শিক্ষকদের একজন চবি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবু তাহের, যিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্মানিত সদস্য। অন্যদিকে দ্বিতীয়জন চবি আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাকির হোসেন, যিনি ২০১৯ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী হলুদ দল মনোনীত শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তাদের দুজনের মতামত ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সূত্র ধরে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-নামধারীদের এমন বিষোদগারে চবির সকল শিক্ষক বিব্রত, মর্মাহত ও অপমানিত বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৭৩-র বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে সদস্য প্রদানকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র অধিকারকে হেয় প্রতিপন্নকারী এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চট্টথাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নিন্দা জ্ঞাপন করছে। শিক্ষক অবমাননাকারীদের এমন আচরণ মুক্তচিন্তা ও গণতন্ত্র চর্চার অন্তরায় এবং এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের নির্লিপ্ততা ও শৈথিল্য প্রদর্শন কখনও কাম্য নয়। কারণ এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে চবি শিক্ষক সমিতি মনে করে।
শিক্ষকদের অবমাননাকারী ও হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রতি শিক্ষক সমিতি জোর দাবি জানান।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক বলেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে আমাদের দুজন শিক্ষককে অবমাননা করে মানববন্ধন ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে আসছে কিছু বিপথগামী ছাত্র। আমরা উপাচার্যের কাছে তদন্ত করে তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি করোনা, পরীক্ষাসহ কিছু কারণে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে একটু দেরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পৃথক দুটি ঘটনায় পত্রিকায় মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে ইউজিসি সদস্য ড. আবু তাহের ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জাকির হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মানববন্ধন, মিছিল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে কিছু শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ প্রাঙ্গণে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ড. আবু তাহেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জাকির হোসেনকে জামায়াতপন্থী শিক্ষক আখ্যা দিয়ে মিছিল ও ফেসবুকে লেখালেখি করা হয়।