বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাপস হত্যার শোকাবহ সেই দিন। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। একে একে সাতটা বছর কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত বিচার হয়নি এই হত্যাকান্ডের। এ ঘটনায় মামলা হলেও সাক্ষীর অভাবে এগোচ্ছে না মামলার বিচার কার্যক্রম।
২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার।
এ ঘটনার পরদিন রাতে হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা করেন তাপসের সহপাঠী হাফিজুল ইসলাম। মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।
ওই মামলায় ২০১৬ সালের ২ মে ২৯ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন পিবিআই পরিদর্শক ও বর্তমান হালিশহর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, তাপস হত্যামামলার মূল অভিযুক্ত হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশা। তার গুলিতে তাপস নিহত হন। বাকি ২৮ আসামির মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা এবং ২৫ জনের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে জড়ো হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। আসামিদের মধ্যে কয়েকজন জামিনে থাকলেও অধিকাংশই পলাতক।
এ দিকে সাক্ষীর অভাবে মামলার কার্যক্রম থমকে আছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের অপেক্ষায় আছে। এই পর্যন্ত কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসেনি বলে ওই পর্যন্তই থমকে আছে।
মামলার বাদী হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘চার্জশিট দেওয়ার পর মামলার আর কোনও অগ্রগতি নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হত্যাকান্ডের বিচার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তাপস হত্যার বিচারও যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে হয়ে যায়।’
বিচার দেখে মারা যেতে চান মা
মৃত্যুপথযাত্রী তাপসের মা মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে সাত বছর ধরে অনবরত চোখের পানি ঝরিয়েই যাচ্ছেন তিনি।
তাপসের ছোট ভাই শ্রাবণ সরকার বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখি বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুতগতিতে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার ভাইয়ের হত্যা মামলা সাত বছর ধরে ঝুলে আছে। আমরা আদৌ বিচার পাবো কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মা খুব অসুস্থ। ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে ৭ বছর ধরে তিনি প্রতিদিনই কাঁদেন। এখন তাঁর একটাই চাওয়া তিনি যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে মরতে পারেন। আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করলে আমরা ভাই হত্যার বিচারটা পাবো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচার চাই।’
৭ বছরেও রায় হয়নি, ছাত্রলীগের অসন্তোষ
তাপস হত্যার ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘একে একে সব হত্যা মামলার বিচার হচ্ছে। শুধু তাপস হত্যা মামলার বিচার হচ্ছে না। ‘তাপস হত্যা মামলার বিচারকাজ কেন থেমে আছে আমার জানা নেই। এই হত্যামামলার বিচার দ্রুত শেষ হোক আমরা সেটি চাই। যারা তাপসকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন দেখা যায় তাপসের খুনিরা ক্যাম্পাসে দাপটের সাথে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায় তখন ছাত্রসমাজের বুকে রক্তক্ষরণ হয়।’
এমআইটি/সিপি