চবির কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ খুলতে তিনদিন লাগল শিক্ষক সমিতির, গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় অবশেষে নিজেদের অবস্থান জানাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন হয়েছে মর্মে অডিও ক্লিপসহ কিছু সংবাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ‘গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন’ বলে জানানো হয়েছে।

রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন হয়েছে মর্মে অডিও ক্লিপসহ কিছু সংবাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ অন্যান্য নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ শিক্ষক সমাজ ও অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে।’

এতে বলা হয়, ‘এমতাবস্থায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি জোর দাবি জানাচ্ছে।’

গত ৩ মে চট্টগ্রাম প্রতিদিনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হলেও এই ইস্যুতে দৃশ্যত নিরব ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সেলিনা আখতার বলেন, ‘বিষয়টি আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তবে এ মুহূর্তে আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি না। আমরা উপাচার্য ম্যামের সাথে কথা বলবো। ওনার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তারপর জানাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি ইতোমধ্যে তিনি (উপাচার্য) ব্যবস্থা নিয়েছেন। যার নাম শোনা যাচ্ছে তাকে আলাদা করে দিয়েছেন, অন্য ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আরেকজনকে সম্ভবত এরেস্ট করেছেন। আর এ ধরনের একটা প্রোপাগাণ্ডা হতে পারে জেনেই রেজিস্ট্রার সাহেব জিডি করে রেখেছেন। জিডির কপিও আমি দেখেছি। এটা হলো শিক্ষক ও কর্মচারী সংক্রান্ত একটা বিষয়। উনি যথাযথ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগের পর অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়।

এর মধ্যে একটি ফোনালাপে প্রভাষক পদের এক প্রার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পিএসকে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে শােনা যায়। অপর একটিতে ফোনালাপে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলাের শীর্ষ ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতেই উপাচার্যের টাকার প্রয়ােজন বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী।

ওই লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ফারসি বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী জসীম উদ্দিনের ফোনালাপের অডিও ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া অডিওগুলোতে উপাচার্যের ভাতিজা আজফার কামাল চৌধুরী শাওন এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ইলিয়াছ সিদ্দিকী ছাড়াও উপাচার্যের নামও ওঠে আসে।

এ ঘটনায় উপাচার্যের পিএসকে অপসারণ করে তার আগের কর্মস্থল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে ফেরত পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!