চন্দনাইশের ঘটনা নিয়ে একদিনের মিস ওয়ার্ল্ডের সিনেমা

মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে একদিনের মাথায় মুকুট হারানো জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার মেয়ে। তার জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়ে হচ্ছে সিনেমা। ‘মিস হোওর বাংলাদেশ’ (বাজে মেয়ে) নামের সেই সিনেমার পুরোটাই আবর্তিত হচ্ছে চন্দনাইশে থাকাকালে এভ্রিলের জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে। আর নিজের জীবনের গল্পে এভ্রিল নিজেই অভিনয় করছেন।

এভ্রিলের বিয়ে হয়েছিল চন্দনাইশের একজন কাপড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সিনেমার পরিচালক নোমান রবিন জানিয়েছেন, গোপন ক্যামেরায় ওই ব্যবসায়ীর তিন ঘণ্টার সাক্ষাৎকার তারা নিয়েছেন, যা ব্যবহার হবে সিনেমায়। সিনেমাটি নির্মাণের জন্য এভ্রিলের বাবা-মা, এলাকাবাসী, শিক্ষকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিডিও ইন্টারভিউ রেকর্ড করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট, বয়স বাড়িয়ে নেওয়া সেই বাল্যবিয়ের কাবিননামা ইত্যাদি নিয়েই স্ক্রিপ্ট লেখা হয়। পরিচালক জানিয়েছেন, গত এক বছর ধরে ওই ছবির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে।

তবে প্রযোজকের অভাবে ‘মিস হোওর বাংলাদেশ’র কাজ আপাতত বন্ধ। শুরুতে একজন প্রযোজক এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও তার পরিবারের আপত্তির কারণে তিনি সিনেমাটিতে আর অর্থায়ন করছেন না।

কয়েকদিন আগে ছবিটির একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায় সুন্দরী প্রতিযোগিতার মুকট পরিহিত একজন নারীর এক চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। শরীর জুড়ে নখের আচড়। মুখে স্কচটেপ লাগানো। তাতে লেখা, ‘হ্যাশ ট্যাগ মি টু’।

নির্মাতা নোমান রবিন তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন—
‘ ছোটবেলায় কাজিনদের দ্বারা এবিউসের স্বীকার। মেয়ের শরীর তরতর করে বেড়ে উঠছে। এসএসসি পরীক্ষা দিতে না দিতেই এলাকার সব মেয়েদের থেকে সে লম্বা, ডাগর ও সুন্দরী হয়ে উঠছে। বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব আসে অহরহ। সাথে হুমকিও। শেষে অভিভাবকের মানবিক ও মানসিক ব্লাক মেইলের স্বীকার হয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হয় মেয়েটি। বয়স তখন সবে ১৬। টাকাওয়ালা তরুন বর তাকে শুধুই সেক্স টয়ের চোখে দেখল। যে পুরুষ ভাল সেক্স করে সেই নাকি আসল পুরুষ! এবিউসড কন্টিনিউড, কি যে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার! নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মে গেল মেয়েটার। বাবা-মা বিবাহিত মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে নারাজ। যেন মেয়েরই সব দোষ। সেখানে থেকে পালিয়ে বাঁচার আসায়, সম্মানের আসায় কত ঘাট, কত ঘাত, কত প্রতিকূলতা পার করতে হল, এ যেন এক ফেরিটেল! সে বুঝে গেল ধুকে ধুকে নয়, বাঁচতে হলে টাকা চাই, নাম চাই, কাজ চাই। নিজে নিজে এইচএসসি পাশ করল, মটর সাইকেল চালানো শিখল, জিমে ভর্তি হল, নাম লেখাল সুন্দরী প্রতিযোগিতায়। এসব করতে পুরুষ বন্ধুরাই তাকে হেল্প করল। আসল বন্ধুর মত করে হেল্প করল, কিছু পাওয়ার আসায় না! বন্ধুরা জানত মেয়েটির সংগ্রামের গল্প।

সুন্দরী প্রতিযোগিতা! প্রথমবারের মত মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে! মেয়েটি একবুক সাহস নিয়ে শত মেয়েদের সাথে গ্লামার ফ্লোরে পা রাখল। সে আরেক ড্রামা! ওরে বাপরে বাপ!! এদেশে মেয়েদের কত কিছু যে সহ্য করতে হয়!! যুদ্ধ শেষে মেয়েটি সেরা সুন্দরী নির্বাচিত হল। সেখানেও সে এবিউসের স্বীকার। কিন্তু এবার পুরো জাতী মিলে মেয়েটিকে এবিউসড করল। ভার্বাল এবিউসড! জাতীয় দৈনিক পত্রিকা নির্লজ্জভাবে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করল। এই ঝড় প্রতিহত করার কেউ নেই মেয়েটির পাশে! মেয়েটি একা, বরাবরই একা। মুকুট হারাল, হারাল সম্মান। পুরুষ্কার হিসেবে পেল জনগনের অপমান, গালি। মেয়েটি সহজ সরল প্রশ্ন সরকার ও জনগনের কাছে, বাল্য বিবাহ যদি অবৈধ হয়। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়, তাহলে সেই বিয়ে অযোগ্যাতার সর্বোচ্চ মাপকাঠি হিসেবে গন্য হতে পারে নাহ! মুকুটের হারানো শোক না হয় সহ্য করা যায়, কিন্তু জনগন তাকে অপমান করতে পারে নাহ। ছোট বেলা থেকে অনেক অন্যায়-অবিচার গিলতে হয়েছে তাকে। কিন্তু জনগনের কাছে সে সান্তনা ও সম্মানের হকদ্বার। জনগনের আচরন অত্যন্ত হতাশাজনক!

যাই হোক, গোপন ক্যামেরা দিয়ে বরের ৩ ঘণ্টা ইন্টারভিউ, মেয়েটির, অর্থাৎ এভ্রিলের মা-বাবা, ভাই, এলাকাবাসী, টিচার এবং ইভ্রিলের ঘন্টার পর ঘণ্টা ভিডিও ইন্টারভিউ রেকর্ড, একাডেমিক সার্টিফিকেট, বয়স বারিয়ে নেয়া সেই বাল্য বিয়ের কাবিন নামা ইত্যাদি কর্মযজ্ঞ করেই তবে স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছিল। প্রায় ১ বছর এটার পেছনে। যদিও ইভ্রিল নিজে এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চায়নি, ভাইয়া বড় একজন প্রতিষ্ঠিত তারকা কাষ্ট কর। আমি বলেছি তোমাকেই অভিনয় করতে হবে! তোমার যত দুর্বলতা, উচ্চারন, জেশ্চার-পশ্চার সমস্যা সব আমি ঠিক করে দিব। আই নো হাও টু ক্রিয়েট এন আর্টিস্ট। লগ্নিকারক অত্যন্ত দ্বায়িত্বশীল এবং একজন ভদ্রলোক হলেও, বিধিবাম, তার পরিবার লগ্নিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। দুর্দান্ত গতিতে শুরু হওয়া প্রজেক্ট হঠাত আটকে গেল। আমিও বিরক্ত হলাম। ধুর! ধুর! বাংলাদেশের ফিল্মের কিসসু হবে নাহ। এর জনগন চলচ্চিত্র বান্ধব নয়। বেহেস্তি বান্ধব জনগন না দুনিয়ায় সুখ পায়, না আখেরাতে।
আই এম সরি এভ্রিল, আই এম সরি টিম! টাকা খোজা, প্রডিউসার খোজা, লগ্নিকারক খোজা আমার কাজ নয়!’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!