অন্যায্য গৃহকর আদায় বন্ধের দাবিতে ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ভবন ঘেরাও করবে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) কদমতলীর গণসমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন করদাতা সুরক্ষা পরিষদের নেতারা।
পাশাপাশি মাসব্যাপী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও ৪১ ওয়ার্ডে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি। অন্যায্য গৃহকর আদায় বন্ধের দাবিতে সংগঠনটি লাগাতার আন্দোলন করে আসলেও অনড় অবস্থানে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন। বাড়িভাড়ার আয়কে ভিত্তি ধরে গৃহকর আদায় করছে সিটি কর্পোরেশন।
সংগঠনের সভাপতি মো. নুরুল আবছার বলেন, ‘গৃহকরবিরোধী আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে চলমান সংগ্রাম কমিটিতে নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রামবাসী যে আসলে ভাল নেই, সেই বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাই।’
সুরক্ষা পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস পপি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং ১৫ মার্চের নগরভবন ঘেরাও কর্মসূচি সফল করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানান।
গণসমাবেশে বক্তারা বলেন, একজন মেয়র সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফ করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তিনি কিভাবে ৪-৫ লাখ টাকা ছাড় দিচ্ছেন, এটা আমাদের বোধগম্য নয়। বর্তমান এসেসমেন্ট বাতিল, আয়তনের ভিত্তিতে পুনরায় এসেসমেন্ট, কর্পোরেশনের দুর্নীতিবাজ রাজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং প্রতি বছর প্রকাশ্যে গণশুনানির আয়োজন করতে হবে।
আগে ভবন বা স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর নিতো সিটি কর্পোরেশন। এখন ভবন বা স্থাপনার ভাড়ার ভিত্তিতে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে গৃহকর কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
নগরবাসী বলছে, ভাড়ার ওপর নির্ধারণ করা গৃহকর চট্টগ্রামবাসীর গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আপিলের পরও সহনীয় হচ্ছে না। আপিলের পরও চার-পাঁচ গুণ বর্ধিত থেকে যায়। ভাড়ার ওপর কর নির্ধারণের এমন আজব নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। এমনকি বাংলাদেশের কোনো কর্পোরেশন বা পৌরসভায়ও নেই। তাহলে চট্টগ্রামবাসীর কী অপরাধ?
সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় সিটি কর্পোরেশন। এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।’
কিন্তু সম্প্রতি পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে পাঁচ বছর পর একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। ‘গলাকাটা গৃহকর আইন বাতিল করো/দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো তার ওপর কর ধরো’—এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
আরএম/ডিজে