চট্টগ্রাম শহরের রাস্তা ফাঁকা, তবে অলিগলি সরগরম

করোনাভাইরাস রুখতে সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছিল। ওষুধের দোকান, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব সেবা বন্ধ করেছে প্রশাসন। কিন্তু নগরের প্রধান সড়কসহ অন্যান্য সড়ক ফাঁকা হলেও অলিগলিতে চলছে জমজমাট আড্ডা। তবে আড্ডা বন্ধে শীঘ্রই মাঠে নামছে পুলিশ।

রোববার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টায় নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে খবর নিয়ে জানা যায়, লোকজন ঘরে অবস্থান না করে প্রয়োজন ছাড়াই গলিতে আড্ডা দিচ্ছেন।

নগরীর জামালখান ওয়ার্ডের হেমসেন লেইনের হুমায়ুন কবির মাসুদ জানান, ‘আমার ফার্মেসীতে যারা আসেন, সবাই ওষুধের প্রয়োজনেই আসেন। মুদি দোকানেও যারা আসেন প্রয়োজনে ঘরে বাইরে আসছেন। কিন্তু তারচেয়ে কমপক্ষে চারগুণ মানুষ কোন প্রয়োজন ছাড়াই ঘর ছেড়ে বাইরে এসে আড্ডা দিচ্ছেন।

শুলকবহর মাদ্রাসা গলিতে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। ছোট ছোট জটলায় যে যার মতো আড্ডা দিচ্ছেন। একপাশে ছেলেদের জটলা, অন্যপাশে বয়স্ক লোকজনের জটলা। চায়ের দোকানে গা ঘেঁষে বসে আড্ডা দিতেও দেখা যায় অনেককে।

এমএম আলী রোডে শিল্পকলায় যেখানে তারুণ্যের আড্ডায় ভরপুর থাকতো সেই শিল্পকল্লা বন্ধ থাকায় তা খাঁ খাঁ করছে। তবে দামপাড়ার গলি দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে কোন বিশেষ অবস্থা চলছে।

ইমতিয়াজ হোসেন নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীকে এই সময়ে আড্ডা দেওয়াটা উচিত কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভাই কী করবো, কতক্ষণ বাসায় থাকা যায়। বোর লাগছে তাই একটু ফ্রেশ হতে বের হলাম।

চট্টেশ্বরীর ব্যাটারি গলি আরও জমজমাট। রীতিমতো হৈচৈ চলছে। কেউ পান চিবুতে চিবুতে গল্প করছেন, কেউ সিগারেট ফুঁকছেন। যুবকদের আড্ডার ইস্যুতো অন্তহীন, চলছেই।

আগ্রাবাদ মুহুরীপাড়া থেকে হোসাইন কবির লিটন বলেন, আমার দোকানে শুকনো খাবার বিক্রি ও মোবাইলের লোড সেবা দেওয়া হয়। দিনে দোকান বন্ধ রাখি, সন্ধ্যা হলে খুলি। নিজের পেটও চালাতে হবে, অন্যদেরও প্রয়োজন মেটাতে হবে। যে পরিমাণ ক্রেতা থাকে তার কয়েকগুণ থাকে আড্ডাবাজ। এভাবে জটলা পাকিয়ে আড্ডা চললে সবকিছু বন্ধ রাখার ফলতো পাবো না।

সদরঘাট কামাল গেইট থেকে রাশেদুল ইসলাম জানান, দিনে ফাঁকা থাকলেও সন্ধ্যা থেকে আড্ডা চলে। মানুষ যে কখন সচেতন হবে। আরও দুঃখের বিষয় আড্ডাবাজরা সবাই ইয়াং। এদের যদি শিক্ষাদীক্ষা না থাকতো, মেনে নেওয়া যেতো।

বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকাটা কর্মজীবী মানুষে ঠাঁসা, নগরীর অন্যান্য এলাকার মতো না। এখন সবাই কর্মহীন। আড্ডা দিয়েই তাদের সময় কাটছে। আগেতো কাজে কর্মে থেকে ক্লান্ত থাকতো। আড্ডা না দিয়ে পরের দিন কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া থেকে ঘরে থাকতো অনেকেই। এখন কেউ ঘরে নেই, সবাই অলি-গলিতে মুখরোচক আড্ডায় মজে আছে।

বাকলিয়ার খাজা রোড থেকে নাছির উদ্দিন জানান, কাজের তাড়া নেই। তিনি নিজেও সকালে ঘুমান। দুপুরে খেয়ে আবার ঘুমান। এরপর বিকেল থেকে পাড়ায় আড্ডা দেন। অন্যদের কথা কী বলবেন, ঘরে নিজেরও সময় কাটেনা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা শিগগির অ্যাকশনে যাচ্ছি। যে কোন মূল্যে মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আর কয়েকটা দিন ঘরে থাকতে হবেই।

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!