রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) চলছে তেল নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ড। অভিনব কায়দায় এখান থেকে প্রায়ই চুরি হচ্ছে ডিজেল, ফর্নেস অয়েলসহ পোড়া তেল। এই চুরি কাণ্ডে রেলের ইয়ার্ড মাস্টার, চালকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব তেল রাতের আঁধারে চুরি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে থাকে একটি চক্র।
এনিয়ে গত দুই বছরে তিনবার তেল ভাউচার লাইনচ্যুতের ঘটনা ঘটেছে। তিনবারই সিন্ডিকেটের চিহ্নিত করা রেললাইনের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। মূলত ইয়ার্ডে ১০০ ফুটের একটি নালা রয়েছে। এই নালার সীমানার মধ্যেই প্রতিবারই তেলের ভাউচার লাইনচ্যুতের ঘটনা ঘটে। আর লাইনচ্যুতের পর ভাউচারের তেল ফেলা হয় নালায়। নালা হয়ে তেল চলে যায় চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের হাতে। সম্প্রতি তেল চুরির দায়ে দু’জনকে আটক করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে গেছে মূলহোতারা।
সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা চট্টগ্রাম রেলে সিজিপিওয়াই হতে ঢাকাগামী ডিজেলবাহী ভাউচার (৬১১৮৪ ও ৬০০৪) থেকে ৪০ হাজার লিটারের বেশি ডিজেল নালায় পড়ে যায়। পরে তা খালে ছড়িয়ে পড়ে।
রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সিজিপিওয়াইয়ের ভেতরে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি নালা আছে। এসব নালা পানি নিষ্কাশনের জন্য বানানো হলেও ব্যবহার হচ্ছে তেল চুরিতে। এসব নালার শেষ অংশে বসানো হয়েছে ড্রাম। এভাবে তেলের ভাউচার লাইনচ্যুত হওয়ার কথা বলে নালা ফেলা হয় তেল। তারপর সেসব তেল নালা হয়ে চলে যায় চোরাকারবারিদের ড্রামে।
এছাড়াও সিজিপিওয়াইয়ের ভেতরে খালের পাড়ে তেলবাহী ভাউচারগুলো রাখা হয় চুরির উদ্দেশ্যে। এরপর সেসব ভাউচার থেকে ও রেলের ইঞ্জিন থেকে কৌশলে মোটরের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে চুরি করা হয় তেল। এজন্য খালপাড়ের সবজি বাগানের মাটির আঁড়ালে ভেতর বসানো হয়েছে পাইপ। এসব পাইপের শেষ প্রান্ত একেবারে খালের মুখে। তারপর তেলগুলো ড্রামে করে রাখা হয় অস্থায়ী খামারে। মূলত তেল চোরাকারবারিরা পশু পালনের নামে খামারগুলো গড়ে তুলেছে।
এছাড়া অনুসন্ধানের সময় ওই জায়গা থেকে পাইপের মধ্যে প্রায় এক লিটারেরও বেশি ডিজেল পাওয়া যায়।
অভিযোগ রয়েছে, তেলপাচার সিন্ডিকেটে রেলওয়ে ইয়ার্ডের মাস্টার আব্দুল মালেক, সাজ্জাদ, তুফান, রাসেল হাসান, নজরুল প্রায় ভাউচার থেকে তেল চুরি করে থাকেন।
লাইনে ত্রুটির কথা বললেও বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) রফিকুল ইসলামে অধীনে কাজ করা কর্মচারীরা কোনো ত্রুটি খুঁজে পাননি বলে জানান।
রেলওয়ে সিজিপিওয়াইয়ের ইয়ার্ডমাস্টার আব্দুল মালেকের কাছে পাইপ বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। পরে পাইপের ছবি দেখানো হলে বাগানে পানি দিতে এই পাইপ ব্যবহারের কথা জানান তিনি।
রেল নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চিফ ইন্সপেক্টর মো. এয়াসিন বলেন, ‘গত ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি তেল চুরির দায়ে রহমত উল্লাহ (২৬) ও মিলন (৩৬) নামের দু’জনকে আটক করে চালান দেওয়া হয়।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রেল বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (পূর্ব) আবিদুর রহমান বলেন, ‘দ্রুত তেল চুরি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ডিজে